- বাংলাদেশ
- জেসিসি বৈঠক: দিল্লীকে পাশে চায় ঢাকা
জেসিসি বৈঠক: দিল্লীকে পাশে চায় ঢাকা

ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ৭ম যৌথ পরামর্শক কমিশনের বা জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বাংলাদেশ ও ভারত।
তবে এবারের বৈঠকে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গুরুত্ব পায় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা। এতে পশ্চিমা চাপ এড়াতে নয়াদিল্লিকে পাশে চায় ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। আর ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইটে বলেন, ৭ম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন এর সভায় মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব ড. এ কে আবদুল মোমেনকে স্বাগত জানাই। আমাদের নিয়মিত সাক্ষাৎ আমাদের বন্ধুত্বকে প্রতিফলিত করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এবারের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় অনিস্পত্তিত ইস্যুর পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে উপ আঞ্চলিক সহযোগিতা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে। সেই সঙ্গে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা এবং 'কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভারসারিস থ্রু স্যাংকশনস অ্যাক্ট (ক্যাটসা)' আইনকে পাশ কাটিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা নিয়ে ভারতের পরামর্শ চেয়েছে। এ ছাড়াও নিকটতম প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পশ্চিমা চাপ এড়াতে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ইউক্রেন সংকট শুরুর পর ভারত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে পরে। ভারতকে পক্ষ নিতে রীতিমতো চাপ দেওয়া হয়। একই চাপ বাংলাদেশের ওপরও রয়েছে। তবে ভারত চাপ সামলে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। বাংলাদেশও একই ভাবে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। এ কারণে বুদ্ধি, পরামর্শসহ বন্ধু হিসেবে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ভারতও উপ আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়লে বিশাল এ বাজারে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া লাগে না। একই ধরনের বার্তা এপ্রিলের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফরে দিয়ে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
গত এপ্রিলে ঢাকা সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্পর্ককে আরও গভীর করা। ভারত এ অঞ্চলে শক্তিশালী উপ আঞ্চলিক সহযোগিতা দেখতে চায়। বিশেষ করে জল বিদ্যুৎ খাতে দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। বিবিআইএন এর আওতায় জলবিদ্যুতে প্রতিবেশীর সঙ্গে একত্রে কাজ করতে ভারত প্রস্তুত। জলবিদ্যুতে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বাণিজ্যে অংশীদারত্বের মাধ্যমে ভারত নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করবে।
এ ছাড়া জেসিসি বৈঠকে সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতি ও বাণিজ্য, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, ভারতের ঋণ ছাড়, জঙ্গিবাদ দমন, পানিবণ্টন, কানেকটিভিটি ও মানুষে মানুষে যোগাযোগে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চায় দুই দেশ। আর বৈঠকে ভারত থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি তুলবে ঢাকা। এ ছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ভারত সফরের আমন্ত্রণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
মন্তব্য করুন