- বাংলাদেশ
- দুর্যোগও চেনে ধনী-গরিব!
দুর্যোগও চেনে ধনী-গরিব!

বিবিএস তথা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যায় দরিদ্রতম মানুষেরা তাঁদের আয়ের ৯৭ শতাংশ হারিয়ে থাকেন, যেখানে সবচেয়ে সচ্ছল মানুষেরা হারিয়েছেন তাঁদের আয়ের ৯ শতাংশ। তা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোট ক্ষতির অর্ধেকেরও বেশি হয় বন্যায়। বুধবার সমকালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্যগুলো তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে '২০ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরিচালিত ওই জরিপে বছরে গড়ে ৩১ হাজার টাকা আয় করে এমন পরিবারকে দরিদ্রতম বলে ধরা হয়েছে। আর বছরে ৭ লাখ টাকার বেশি আয় করে এমন পরিবারকে বলা হয়েছে সবচেয়ে সচ্ছল। সোমবার প্রকাশিত বিবিএসের ওই জরিপের ফলে আরও দেখা গেছে, বন্যা মোকাবিলায় নিজস্ব প্রস্তুতি নেওয়ার সক্ষমতা নেই ৯০ শতাংশ পরিবারের এবং বন্যার আগাম খবর পাওয়ার পরও জরুরি প্রস্তুতি নেওয়ার সামর্থ্য নেই ৮৬ শতাংশ পরিবারের। এ কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে, বাংলাদেশ একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এখানে প্রায় সারাবছর ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা লেগেই থাকে। এসব দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় গরিব মানুষকে। বিবিএসের জরিপটি এ নির্মম সত্যই তুলে এনেছে। এ জরিপের ফলকে আরেকভাবেও প্রকাশ করা যায়। তা হলো, প্রধানত রাষ্ট্র অনুসৃত ভুল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নীতির কারণে সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে যে চরম বৈষম্য তৈরি হয়ে আছে, তাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
তবে এ বৈষম্য কিছুটা হলেও কমানো যেত, যদি দুর্যোগের পর রাষ্ট্রের তরফ থেকে সাধারণত যে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করা হয় তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি এসব কর্মসূচিতে গরিব মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা দেখা যায় না। এ পর্যন্ত দেশে যত দুর্যোগ- তা প্রাকৃতিক হোক আর মানবসৃষ্ট; এসেছে তার প্রায় সবক'টিতেই। একদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় দেওয়া সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল বলে অভিযোগ উঠেছে, আরেকদিকে দুর্গম এলাকায় বসবাসরত মানুষের বঞ্চিত হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। যেমন, গত কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে যে প্রলয়ংকরী বন্যা চলছে তাতে এক কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু মানুষ তাদের শেষ সম্বলটুকুও বানের জলে ভেসে যেতে দেখেছে। ওইসব এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ সহায়তা গেছে, তা খুবই অপ্রতুল বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। আরও দুঃখজনক হলো, ওই ত্রাণ অনেক দুর্গম এলাকায় সামান্যও পৌঁছেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রসঙ্গক্রমে সমকালের একই দিনের আরেকটি প্রতিবেদনের কথা বলা যায়, যেখানে লেখা হয়েছে, সিলেটের জৈন্তা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সবক'টি গ্রাম এখনও পানির নিচে। লোকজন কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কেউ মসজিদে, কেউবা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন; যাঁদের অনেকের অভিযোগ, কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি তাঁদের কাছে। এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, এ অপ্রতুল ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচির মধ্যেই আবার অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি জেঁকে বসে। ভুক্তভোগীরা এর প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশ্বাসের চেয়ে বেশি কিছু পায় না। এদেশে এমনও দুর্যোগ দেখা গেছে, যা শুধু উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হয়নি। বলাবাহুল্য, উপকূলীয় এলাকার অধিবাসীর বেশিরভাগই দরিদ্র ও অসহায় শ্রেণির মানুষ।
আমরা মনে করি, এ বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছ থেকে যে প্রশংসা পেয়েছে, তার সঙ্গে মানানসই হয় না। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের সঙ্গে ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের নিরিখে কোনো বৈষম্য করবে না বলে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে; তার সঙ্গেও এ পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক। এটাও মানতে হবে যে, এ পরিস্থিতিকে জিইয়ে রেখে কোনো টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে এর অবসান ঘটাতে হবে। এ জন্য শুধু রাষ্ট্রীয় গরিববিরোধী নীতি বদলালে চলবে না; সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যেও গরিববান্ধব মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
তবে এ বৈষম্য কিছুটা হলেও কমানো যেত, যদি দুর্যোগের পর রাষ্ট্রের তরফ থেকে সাধারণত যে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করা হয় তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি এসব কর্মসূচিতে গরিব মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা দেখা যায় না। এ পর্যন্ত দেশে যত দুর্যোগ- তা প্রাকৃতিক হোক আর মানবসৃষ্ট; এসেছে তার প্রায় সবক'টিতেই। একদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় দেওয়া সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল বলে অভিযোগ উঠেছে, আরেকদিকে দুর্গম এলাকায় বসবাসরত মানুষের বঞ্চিত হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। যেমন, গত কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে যে প্রলয়ংকরী বন্যা চলছে তাতে এক কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু মানুষ তাদের শেষ সম্বলটুকুও বানের জলে ভেসে যেতে দেখেছে। ওইসব এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ সহায়তা গেছে, তা খুবই অপ্রতুল বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। আরও দুঃখজনক হলো, ওই ত্রাণ অনেক দুর্গম এলাকায় সামান্যও পৌঁছেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রসঙ্গক্রমে সমকালের একই দিনের আরেকটি প্রতিবেদনের কথা বলা যায়, যেখানে লেখা হয়েছে, সিলেটের জৈন্তা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সবক'টি গ্রাম এখনও পানির নিচে। লোকজন কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কেউ মসজিদে, কেউবা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন; যাঁদের অনেকের অভিযোগ, কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি তাঁদের কাছে। এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, এ অপ্রতুল ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচির মধ্যেই আবার অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি জেঁকে বসে। ভুক্তভোগীরা এর প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশ্বাসের চেয়ে বেশি কিছু পায় না। এদেশে এমনও দুর্যোগ দেখা গেছে, যা শুধু উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হয়নি। বলাবাহুল্য, উপকূলীয় এলাকার অধিবাসীর বেশিরভাগই দরিদ্র ও অসহায় শ্রেণির মানুষ।
আমরা মনে করি, এ বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছ থেকে যে প্রশংসা পেয়েছে, তার সঙ্গে মানানসই হয় না। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের সঙ্গে ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের নিরিখে কোনো বৈষম্য করবে না বলে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে; তার সঙ্গেও এ পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক। এটাও মানতে হবে যে, এ পরিস্থিতিকে জিইয়ে রেখে কোনো টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে এর অবসান ঘটাতে হবে। এ জন্য শুধু রাষ্ট্রীয় গরিববিরোধী নীতি বদলালে চলবে না; সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যেও গরিববান্ধব মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
মন্তব্য করুন