- বাংলাদেশ
- তিন দশকে হাওর অঞ্চল ৮৭ শতাংশ ভূমি হারিয়েছে: গবেষণা
তিন দশকে হাওর অঞ্চল ৮৭ শতাংশ ভূমি হারিয়েছে: গবেষণা

সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্টরা, ছবি: সমকাল
গত তিন দশকে উদ্বেগজনক হারে হাওর অঞ্চল কমে গেছে বলে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ হাওর অঞ্চল কমে গেছে। ২০২০ সালের মধ্যে হাওর অঞ্চল প্রায় ৮৭ শতাংশ ভূমি হারিয়েছে। এরমধ্যে ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাওর অঞ্চল কমেছে।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। প্রকৌশলী-পরিকল্পনাবিদ পেশাজীবীদের সংগঠন ‘ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)’ এর আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রবন্ধ তুলে ধরেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান। এছাড়া সেখানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এ প্রকল্পের গবেষক পরিকল্পনাবিদ ইনজামুমুল হক রিফাত, পরিকল্পনাবিদ ফরহাদুর রেজা প্রমুখ। এছাড়া সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি জেলার (সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মোট ৩৭৩টি হাওর অঞ্চলের ওপর ২০২১ সালের মার্চ থেকে এ গবেষণা শুরু হয়, যা শেষ হয় এ বছরের জুনে।
গবেষণায় ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হাওরের স্যাটেলাইট ইমেজ সংগ্রহ করে তিন দশকের ভূমি সীমার পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণা পরিচালনা করেন পরিকল্পনাবিদ ইনজামুমুল হক রিফাত ও পরিকল্পনাবিদ মারিয়া মেহরিন এবং এর সুপারভাইজার ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাকিল আখতার।
মূল প্রবন্ধে আদিল মোহাম্মদ খান গত তিন দশকে এসব হাওর অঞ্চলে ভূমি সীমার পরিবর্তন ও জলাশয় ধ্বংস করে স্থাপনা নির্মাণের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে হাওর অঞ্চল কমে গেছে। বিশেষ করে ২০০৬ সালের পর উদ্বেগজনক মাত্রায় হাওর অঞ্চল কমেছে।
গবেষণাপত্রে তিনি কয়েক দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলো হল, হাওর এলাকা রক্ষায় সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, হাওরের হারানো অঞ্চল যথাসম্ভব ফিরিয়ে আনতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বায়োডাইভারসিটি রক্ষায় হাওর, খাল-বিলসহ সব ধরনের জলাশয় রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে জলাশয় অঞ্চলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করা, হাওর অঞ্চল ধ্বংস করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে জমির স্বল্পতা রয়েছে এটা সত্য। তবে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন করা যাবে না। প্রকৃতিকে রক্ষা করে আমাদের টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। হাওর অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণের আগে যথাযথ পরিকল্পনা নিতে হবে। এক্ষেত্রে হাওরের ওপর রাস্তা নির্মাণ না করে উড়াল সেতু নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে হাওরের পানি প্রবাহ ঠিক থাকবে।
তারা বলেন, শুধু হাওর এলাকার জন্যেই নয় বরং পুরো দেশকে পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। প্রকল্প যথাযথ মনিটরিং করতে হবে। না হলে আমরা বারবার নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হব।
মন্তব্য করুন