পদ্মা সেতু চালুর পর চাপ বাড়বে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায়। রাজধানীর সঙ্গে দূরত্ব কমে যাওয়ার পাশাপাশি ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা না থাকায় বন্দরটির গুরুত্ব বেড়ে যাবে বহু গুণ।

তবে এই চাপ সামাল দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত দুই থেকে তিন বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আটটি বড় প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ প্রায় শেষের দিকে।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে মোংলার দূরত্ব কমে যাবে। তখন রাজধানীর আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দরের প্রতি আগ্রহী হবে। মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়বে।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানী থেকে চট্টগ্রামের তুলনায় মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সময় ও টাকা খরচ কম হবে। গার্মেন্টস মালিকরা অনেকেই মোংলা বন্দর দিয়ে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করবেন।

বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী জানান, ফেরিঘাটে সমস্যার কারণে খুলনা থেকে কাঁচা পাট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সেতু চালু হলে সময় ও টাকা সাশ্রয়ের পাশাপাশি দুর্ভোগও কমবে। তাছাড়া মোংলা বন্দরের মাধ্যমেই রপ্তানি করা যাবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুলনা থেকে হিমায়িত চিংড়ি চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি হয়। পদ্মা সেতু চালুর পর চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠাতে বিড়ম্বনা থাকবে না, তখন মোংলা বন্দরের মাধ্যমে হিমায়িত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে মনে করেন বিএফএফইএর সহসভাপতি হুমায়ুন কবীর।

আমদানি-রপ্তানিকারকরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দরে যে চাপ বাড়বে, তা সামাল দেওয়ার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বন্দরের জেটি পর্যন্ত ৯ মিটার ড্রাফটের নাব্য। বর্তমানে জেটিতে আছে সাড়ে ৭ মিটার ড্রাফট।

মোংলা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দরে কর্মব্যস্ততা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তবে বন্দর ব্যবহারকারীদের আগ্রহ ধরে রাখতে বন্দরের জেটি ও পশুর চ্যানেল নিয়মিত ড্রেজিং, নির্মাণাধীন খুলনা-মোংলা রেললাইন দ্রুত চালু এবং কাটাখালি থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা প্রয়োজন।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, নতুন করে জেটি তৈরি করা হচ্ছে। ড্রেজিং শেষ হলে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ বন্দরের জেটি পর্যন্ত আসতে পারবে। বর্তমানে যে সক্ষমতা রয়েছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে তা তিন গুণ বাড়বে।