গত শনিবার জাঁকজমকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। পরদিন রোববার ভোরে সেতু খুলে দেওয়া হয় জনসাধারণের জন্য। প্রথম দিনই অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনায় পরদিন সোমবার থেকে মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধের আদেশ দেয় সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ থাকায় এবং ফেরি না চলায় বিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাওয়া টোল প্লাজা এলাকায় দেখা যায়, বাস, প্রাইভেট কার, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন টোল প্লাজার সামনে আসছে। কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া এসব যানবাহন টোল পরিশোধ করে সেতুতে উঠে জাজিরার উদ্দেশে রওনা করছে। ভোগান্তি ছাড়াই সেতুতে উঠতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও চালকেরা। তবে মোটরসাইকেল চালকরা অনেকে সেতুতে মোটরসাইকেল নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি না জেনেই চলে আসছেন। তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সেতু সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে খুব স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর মাওয়া প্রান্তে কোনো চাপ নেই। মোটরসাইকেল পারাপার বন্ধ রয়েছে। সেতুতে না নামা, ছবি তোলা- এসব বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সেতু কর্তৃপক্ষের টহল দল সেতুতে টহল দিচ্ছে। গত দুদিনে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সাড়ে ১৫ হাজার যানবাহন থেকে প্রায় ২ কোটি ৫ হাজার ৩০০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।

এদিকে গত রোববার রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর গত সোমবার সকাল থেকে সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচলও। সবশেষ গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ১১৯টা মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরি কুঞ্জলতা শিমুলিয়া ঘাট থেকে শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর পর থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো ফেরি ছেড়ে যায়নি। সেতু ও ফেরিতে মোটরসাইকেল পার করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মোটরসাইকেল আরোহীরা।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দুজন মোটরসাইকেল আরোহী মাওয়া টোল প্লাজার সামনে আসেন। এ সময় সেতু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা মোটরসাইকেল আরোহীদের টোল প্লাজা থেকে ফিরিয়ে দেন। তাদের একজন মো. মশিউর রহমান। তিনি মিরপুরে চাকরি করেন। তার বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়। মশিউর বলেন, সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার বন্ধ বিষয়টি জানা ছিল না। এ জন্য তিনি সেতু এলাকায় আসেন। সেতু থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, ফেরি চলছে না। কিছু সময় অপেক্ষা করে আবারও টোল প্লাজার সামনে এসেছেন।

মশিউর বলেন, ‘মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুতে উঠতে পারছি না। এখন পিকআপ ভ্যানে করে কোনোভাবে মোটরসাইকেলটি সেতু পার হওয়া যায় কি না চেষ্টা করব।’

এস এম রিয়াদ হোসেন নামের আরেক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, তিনি রাজধানীর বনশ্রীতে থাকেন। যাবেন মাদারীপুরের পুরান বাজার এলাকায়। তার ভাষ্য, সব সময় ফেরিতে যেতেন। এখন ফেরি বন্ধ। সেতুতে উঠবেন, সেখানেও নিষেধাজ্ঞা। কী করবেন, বুঝতে পারছেন না।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ বলেন, ঘাটে ছয়টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্য চারটি সচল। পদ্মা নদীতে এখন প্রচণ্ড স্রোত। ফেরি চালালে ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। সকাল থেকে ১৫-২০টি মোটরসাইকেল ঘাটে এসে ঘুরে চলে গেছে। যদি ঘাটে একটি ফেরি পূর্ণ করার মতো মোটরসাইকেল আসে, তাহলে ফেরি এ ঘাট থেকে ছাড়া হবে।