- বাংলাদেশ
- বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘন
বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘন

ফাইল ছবি
কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছয়টি পদে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে আবেদন করে কেউ হয়েছেন সিনিয়র কুক ও বাস হেলপার, সিকিউরিটি গার্ড পদে আবেদন করে কেউ হয়েছেন সহকারী কুক। নিয়োগপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে আগে থেকেই অস্থায়ীভাবে কাজ করছিলেন। শুধু গ্রেড পরিবর্তন হওয়ায় উভয় পদেই তাঁদের চাকরি সক্রিয় ছিল। অনিয়ম-দুর্নীতির এ বিষয়টি জানাজানি হলে নতুন নিয়োগগুলো স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ওই ছয়জনের বেতন-ভাতা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া এসব নিয়োগে জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের নিরাপত্তা প্রহরী মনির হোসেন ও অফিস সহায়ক কাজী মহিন উল্লাহ সদ্য চালু হওয়া বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হলে স্বপদেই আবেদন করেছিলেন। দুটি পদই ২০তম গ্রেডের। তবে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয় ১৮তম গ্রেডের সিনিয়র কুক পদে। ওই একই পদে মোহাম্মদ জিহান ও জামাল হোসেন নামে দুই কর্মচারীও আবেদন করে নিয়োগ পান ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক পদে। জিহান রেজিস্ট্রার দপ্তরে কাজ করতেন। জামাল সংগীত বিভাগে কাজ করতেন। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের অফিস সহায়ক থেকে আব্দুল আলিম বাস হেলপার পদে আর রাবেয়া বেগম নিয়োগ পান কমনরুম গার্ল হিসেবে।
এর আগে ২০২১ সালের ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম সিন্ডিকেট সভায় চুক্তিভিত্তিক ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারীদের একটি তালিকা করা হয়। তালিকা প্রকাশের চার দিন পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ১৬তম গ্রেডের সহকারী মেকানিক পদে একজন, ১৮তম গ্রেডের ইলেকট্রিশিয়ান পদে একজন ও লিফট অপারেটর পদে চারজন, ১৯তম গ্রেডের মেকানিক হেলপার পদে একজন ও ২০তম গ্রেডের অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও সমমানের পদে ১৯ জন চাওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না থাকার পরও ১৮তম গ্রেডের সিনিয়র কুক, ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক, বাস হেলপার ও কমনরুম গার্ল হিসেবে ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর থেকে নোট পাঠানো হয় উপাচার্যের কাছে।
এ ছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে। বাস হেলপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আব্দুল আলিমের অফিস সহায়ক পদে ক্রমিক ছিল ২৬। সুইপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিনা রানী দাসের অফিস সহায়ক পদে ক্রমিক ছিল ২৯। কুক পদে নিয়োগ পাওয়া কাজী মহিন উল্লাহর অফিস সহায়ক পদে ক্রমিক ছিল ৩৫, কমনরুম গার্ল হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাবেয়া বেগমের অফিস সহায়ক পদে ক্রমিক ছিল ৪১। কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জামাল হোসেন ছিলেন সংগীত বিভাগের অফিস সহায়ক, তার ক্রমিক ছিল ৬২। সহকারী কুক পদে নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ জিহানের নিরাপত্তা প্রহরী পদে ক্রমিক ছিল ৭, বাজারকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. ইছহাক শেখের নিরাপত্তা প্রহরী পদে ক্রমিক ছিল ৮ এবং সহকারী কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. মনির হোসেনের নিরাপত্তা প্রহরী পদে ক্রমিক ছিল ৯। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করেন, রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তাঁদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। তাই তাঁরা আবেদন করেছিলেন। তবে তাঁদের পদ কেন পরিবর্তন ঘটল, কেন বেতন বন্ধ হলো; তা তাঁরা জানেন না। এখন চাকরি চলে গেলে তো তাঁরা বাঁচবেন না।
কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের কাজী মনির বলেন, অতীতেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, এখনও হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করতে এই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, আমরা শুনেছি নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। যোগ্যরা বাদ গেছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
রেজিস্ট্রার দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জিয়াদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই। রেজিস্ট্রার এ বিষয়ে কথা বলতে মানা করেছেন।
রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জান বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। উপাচার্যের কাছে একটি পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছি। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, নিয়োগে কোনো ত্রুটি থাকলে আমরা তা বাতিল করব।
এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক খন্দকার মনিরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটি সভা করেছি। তদন্ত চলছে। খুব দ্রুতই ফল জানানো হবে।
মন্তব্য করুন