উত্তরাঞ্চলে কাঁচা চামড়ার অন্যতম বড় বাজার দিনাজপুরে। প্রতিবছর কোরবানির সময় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকেও এখানে চামড়া আসে। প্রায় এক লাখ চামড়া কেনাবেচা হয় দিনাজপুরের রামনগর বাজারে। তবে এই বছর লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক চামড়াও আসেনি।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় কোরবানি হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৬১১টি গরু ও ছাগল। তার মধ্যে বাজারে এসেছে মাত্র ৪৩ হাজার পশুর চামড়া। বাকি ৮২ শতাংশ চামড়ার হদিস নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনও কিছু চামড়া বাজারে আসবে। কবে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় চামড়া ভারতে পাচারের আশঙ্কা রয়েছে।
উত্তরের অন্যতম বড় চামড়ার বাজার রামনগরে গত দুই দিন ঘুরে দেখা যায়, বাজারের বিভিন্ন গোডাউনে চলছে চামড়ায় লবণ দেওয়া ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। দিন থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা ব্যস্ত। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় ব্যস্ততা কম।

চামড়া শ্রমিক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এখানে দিনহাজিরা হিসেবে কাজ করেন। গত বছর বা তার আগের বছরের তুলনায় এবার কাজ অনেক কম। সিরাজুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, সাধারণত বছরের প্রতিটি দিনই এখানে কাজ হয়। তবে কোরবানির সময় কাজের মাত্রা বেড়ে যায়। যদিও এ বছর চামড়া তেমন আসেনি।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এবার চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ছাগলের চামড়ার চাহিদা নেই বললেই চলে। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ছোট ব্যবসায়ী ও কোরবানি দেওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। দিনাজপুর শহরের লালবাগ এলাকার শওকত আলী বলেন, আমি লালবাগ থেকে ২০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছি। ১১ হাজার টাকার ছাগলের চামড়ার দাম বাজারে পাঁচ টাকাও বলেনি। পরে চামড়া ফেলে দিয়ে গেছি।

দিনাজপুর সদরের চেরাডাঙ্গি এলাকার শাহ আলম বলেন, পুলহাট থেকে প্রতিটি চামড়া কিনেছি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায়। সরকার যে রেট দিয়েছে সেটা না পেলেও গতবারের তুলনায় দাম বেশি। তবে রাজবাড়ী এলাকার আজিমউদ্দিন বলেন, গড়ে প্রতিটি চামড়া নিয়েছি ৬০০ টাকায়। বাজারে দামও বলছে ৬০০ টাকা। তাহলে লবণ দেওয়া, প্রসেসিংসহ বাকি খরচ তো উঠল না।

বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, রামনগরে এবার আগের বছরের তুলনায় অর্ধেক চামড়াও আসেনি। এতে প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। পাশাপাশি দিনাজপুর সীমান্ত এলাকা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কাও রয়েছে।

দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে এ বাজারে ৪০ হাজার গরু ও ৫০ হাজার ছাগলের চামড়া প্রস্তুত করা হয়। তবে এবার গরুর চামড়া পাওয়া গেছে ১৮ হাজার আর ছাগলের চামড়া ২৫ হাজার। দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন জানান, এ বছর দিনাজপুর জেলায় গরু ও মহিষ কোরবানি হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৩২টি এবং ছাগল এক লাখ ২৮ হাজার ৫৭৯টি।

প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে জেলায় কোরবানির পশুর ১৮ শতাংশ চামড়াও বাজারে আসেনি। পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলার চামড়াও আসেনি।

দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, এবারে অর্ধেক চামড়াও আসেনি। হয়তো লবণজাত চামড়া আরও আসবে। পাশের জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে সম্পূর্ণ চামড়া এলে হিসাবটি বলা যাবে। তিনি বলেন, গত তিন বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কারণ, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলেও আমাদের নির্ধারিত মূল্য দেওয়া হয়নি। ট্যানারি মালিকদের কাছেও প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

সংগঠনের সভাপতি জুলফিকার আলী স্বপন বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশিতে চামড়া বেচাকেনা সবাইকে জানিয়েছি, যদি কেউ চামড়া বিক্রি করতে না পারে, তারা যেন লবণ দিয়ে রাখে। প্রয়োজনে তাদের জায়গা পর্যন্ত দেওয়া হবে। তবে ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কেনে না। বিষয়টি সুদৃষ্টিতে রাখতে সরকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। পাটের মতো যেন এই শিল্পটি ধ্বংস না হয়।