- বাংলাদেশ
- ‘সংখ্যালঘুদের বেলায় সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে’
নড়াইলে হিন্দু বাড়িতে হামলার প্রতিবাদ
‘সংখ্যালঘুদের বেলায় সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে’

শহীদ মিনারের সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে যান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। ছবি- সমকাল
সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সংখ্যালঘুদের বেলায় সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এখন সময় হয়েছে তাদের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তারা এসব কথা বলেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারী দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেন তারা। শহীদ মিনারের সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে যান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলা পরিষদের অন্যতম সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিরা যখন খুশি অত্যাচার করবে, আগুন লাগাবে- এটা যেন তাদের কাছে খেলা। পাহাড়েও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। কিন্তু সরকার কী করছে? সংখ্যালঘুদের বেলায় সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। কারণ, সংখ্যালঘুদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে হেফাজতিরা বেজার হবে। এখন সময় হয়েছে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
তিনি বলেন, ১৯৫৪ সাল থেকে এই সরকারকে আমরা ভোট দিয়ে আসছি। যদি সরকার মনে করে এদেরকে দেখলেও ভোট দিবে, না দেখলেও ভোট দিবে তাহলে ভুল হবে। সরকার যদি অবিলম্বে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে আগামী ২২ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন কর্মসূচি পালন করবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
নড়াইলসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা মোকাবেলা করতে রাজনৈতিক-সামাজিক ও প্রশাসনিক দুর্বলতা রয়েছে উল্লেখ করে পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির তৎপরতা রয়েছে। যদিও সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তাদেরকে মোকাবিলার জন্য যা যা প্রয়োজন সেটা করা হয়নি। যখনি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে সরকার মোকাবেলা করছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোকাবেলা করতে পারছেন না।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারী দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ছবি- সমকাল
তিনি আরও বলেন, যারা বিরোধী দলের রাজনীতি করছেন তারা কি রাজনীতি করছেন তা বিশ্বব্যাপী জানা আছে। তারাই সংবিধান পরিবর্তন করেছে। এখনো ওই কর্মকাণ্ড করেই যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশানের সাবেক মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও একের পর এক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। একটি কথা তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আর হবেনা। আমরা দেখতেও চাইনা, অপেক্ষাও করতে চাইনা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সরাসরি ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। আমরা জানি, কিভাবে আমাদের দাবি আদায় করতে হয়। আপনারা সংখ্যালঘু জাতিগত সম্প্রদায়কে নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এখনো সময় আছে, এদিকে যদি আপনারা হস্তক্ষেপ না করেন, তাহলে আমরা রুখে দাঁড়াবো। আমাদের অস্তিত্ব যদি হুমকির মুখে পড়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, কিভাবে দেশ পরিচালনা করতে হয়, কিভাবে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হয়।
পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্রী কাজল দেবনাথ বলেন, এদেশের সংখ্যালঘুরা ১৯৫৪ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গ দিয়ে এসেছে। সংখ্যালঘুরা সেই সময়ে তাদের সংরক্ষিত আসন ছেড়ে দিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন না করলে ৫৪’র নির্বাচনে জয় পাওয়া সম্ভব হতো না। এমনকি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এদেশে সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগকে শতভাগ ভোট দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধেও আমরা রক্ত দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ দেশে কারো দয়ায় থাকি না। সরকারকে আমাদের বিষয়ে ভাবতে হবে। অবিলম্বে দেশে সংঘটিত সকল ধরনের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার করতে হবে। একইসঙ্গে ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে হবে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ছাড়াও বাংলাদেশ আইনজীবি ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশান, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, সনাতন সংগঠন, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ সহ সমমনা আঠারটি সংগঠন সমাবেশে অংশগ্রহণ করে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য শুভ্রত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়, শ্রী জয়ন্ত কুমার দেব, শ্রী মনীন্দ্র কুমার নাথ, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুমনা গুপ্তা, শিক্ষক ঐক্য পরিষদের অরুণ কুমার গোস্বামী, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অশীথ কুমার রায় শিশির, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশানের মহাসচিব হেমন্ত আয় কোড়াইয়া, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সদস্য সচিব পলাশ কান্তি দে, আইনজীবি ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুপম চক্রবর্তী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি অলকা ঘোষ, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি ব্যারিস্টার তাপস ধর, সনাতন সংগঠনের ঢাকা মহানগর ইউনিটের যুগ্ন আহ্বায়ক সাজু চৌধুরী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন