- বাংলাদেশ
- পরিবহন খাতে জ্বালানির ব্যবহার কমানোর চিন্তা
পরিবহন খাতে জ্বালানির ব্যবহার কমানোর চিন্তা
লোডশেডিং নিয়ে নতুন পরিকল্পনা আগামী সপ্তাহে

ছবি: ফাইল
চলমান জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট কাটাতে সরকার একগুচ্ছ সাশ্রয়ী উদ্যোগ নিয়েছে। সাময়িকভাবে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, এলাকাভিত্তিক সূচি ধরে লোডশেডিং এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের ব্যবহারে লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। তবে সরকারের এসব উদ্যোগে খুব বেশি জ্বালানির সাশ্রয় হচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা। তাই নতুন কিছু উদ্যোগের বিষয়ে ভাবছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে পরিবহন খাতে জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার চিন্তা চলছে। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের বিষয়েও নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে। চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। চাহিদা মেটাতে কম মূল্যে জ্বালানি মিলবে- এমন বাজার খোঁজা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে সর্বশেষ উপায় হিসেবে সহনীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ সূূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সপ্তাহ খানেক পর্যবেক্ষণ করে লোডশেডিং নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা করা হবে। খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ডিজেলের ব্যবহার বন্ধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমালে ব্যক্তিগত পর্যায়ে জেনারেটরে ডিজেলের ব্যবহার বাড়বে। যেসব ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, বিদ্যুৎ না কিনলেও চুক্তি অনুসারে এসব কেন্দ্রের মালিকদের মাসে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা দিতে হবে সরকারকে। দেশে ১০টি ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে জ্বালানির চাহিদা মোট ডিজেল সরবরাহের ৩-৪ শতাংশ। ফলে সরকারের এ সিদ্ধান্তে খুব বেশি জ্বালানি সাশ্রয় হবে না। দেশের মোট জ্বালানি তেলের ৭০ শতাংশ ডিজেল (৫০ লাখ টন)। এ ডিজেলের ৭০ শতাংশ পরিবহন খাতে ও ২০ শতাংশ কৃষি খাতে ব্যবহূত হয়। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, পরিবহনে জ্বালানি সাশ্রয়ী হলে সুফল মিলবে। সূত্র জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের ব্যবহার কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে জ্বালানি বিভাগ। বিশেষ করে পরিবহন খাতে ডিজেলের ব্যবহার কমিয়ে আনার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম সমকালকে বলেন, পরিবহন খাতে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি খরচ হয়। এ খাতে সাশ্রয় করা গেলে বড় ধরনের সুফল মিলবে। পুরোনো পরিবহন, যেগুলোর ইঞ্জিন বেশি তেল খরচ করে, সেগুলো চালানো বন্ধের বিষয়ে কঠোর হতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল কমিয়ে এনে গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
এদিকে ব্যয় সাশ্রয়ের উদ্যোগ হিসেবে গত মঙ্গলবার থেকে এলাকাভিত্তিক সূচি ধরে লোডশেডিং শুরু করে সরকার। যদিও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দেশের অধিকাংশ এলাকায় একাধিকবার লোডশেডিং করতে হয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে। তাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সপ্তাহখানেক পর্যবেক্ষণ করে লোডশেডিং নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা করা হবে। তিনি বলেন, কোনো কোনো গ্রামে তিন-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ওখানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এক সপ্তাহ পর তা জানানো হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কয়েক মাস পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। কারণ, এ সময়ের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে আসছে, আদানি (ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ) চলে আসছে। নসরুল হামিদ জানান, সরকার কম দামের জ্বালানির বাজার খুঁজছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি তেল প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানোর নানা উপায় নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে আনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আনা-নেওয়ায় বড় গণপরিবহন ব্যবহারসহ বিভিন্ন উদ্যোগের লাভক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গৃহীত পদক্ষেপে যদি পরিস্থিতি সামলানো যায়, তাহলে ভালো। না হলে সর্বশেষ উপায় হিসেবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে। তবে তা অবশ্যই সহনীয় হবে। গত ৭ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন নসরুল হামিদ।
মন্তব্য করুন