মাদকের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গাঁজা, ইয়াবা, মদসহ প্রায় সব ধরনের মাদকই মিলছে ক্যাম্পাসটিতে। ফলে মাদকের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। মাদকের অর্থ জোগাড়ে ছিনতাই ও সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

সাত মাস আগে অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ায় প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে দুই বার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠায় কর্তৃপক্ষ ও তার পরিবার। গত ২৫ মে প্রথম বর্ষের আরেক ছাত্র মাদক সেবনে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় তার সহযোগীরা। ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ১৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক হয় আনোয়ার জোয়ার্দার নামে এক মাদক ব্যবসায়ী। গত ১০ জুন ২৫ গ্রাম গাঁজাসহ প্রধান ফটকে পুলিশের হাতে আটক হয় লোকপ্রশাসন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। এদিকে, গত ১৮ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তেলবাহী ট্রাকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্যের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করতে এসে আটক হয় কাব্য। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা অস্ত্রসহ তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন। মাদকাসক্ত অবস্থায় তারা এই ছিনতাই করে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রধান আবদুস সালাম সেলিম। গত ৩১ মে রাতে ক্যাম্পাসের এক ব্যবসায়ীর ছেলে ও তার বন্ধুদের মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল হয়।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, গাঁজা ও ইয়াবার পাশাপাশি ফেনসিডিল, প্যাথিডিন, নালবন, পেনটাজোসিনসহ বিভিন্ন ইনজেকশনে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি দুই ছাত্রের এলএসডি মাদক গ্রহণের তথ্যও পাওয়া গেছে।

মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত অন্তত একডজন ছাত্রের নামেরও তালিকা করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত অন্তত সাতজনসহ পাঠ চুকানো পাঁচ ছাত্র নেতার নাম রয়েছে।

মাদকসেবীদের দেওয়া তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সরবরাহ হয় শেখপাড়া থেকে। ব্যবসায়ীদের বাড়ি থেকেও মাদক নিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসজুড়ে মাদকের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে একটি ছাত্র সংগঠনের তিনটি উপগ্রুপের নেতারা। বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটছে। তবে মাদকের নিয়ন্ত্রণ নিতেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় বলে জানা গেছে।

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'প্রশাসন সব জানে। তারা হার্ড লাইনে যেতে চায় না। কর্তৃপক্ষ না চাইলে তো আমরা ক্যাম্পাসে বা হলে অভিযান চালাতে পারি না।'

প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'ভিসি বলছেন পুলিশ বাইরে যা করার করুক। কিন্তু ভেতরে পুলিশ নামানোর দরকার নেই।'

উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম সমকালকে জানান, জেল-জুলুম দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাদের মোটিভেট করতে হবে। তাঁরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের জায়গা থেকে যতটুকু করার তা করবেন তাঁরা।