
কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ পর থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি একমাত্র উপায় স্বাস্থ্যবিধি মানা। দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর ফের সবখানে 'নো মাস্ক, নো সার্ভিস' নীতিতে ফেরে সরকার। তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পথে এলেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীন মানুষ। হাসপাতালগুলোতে এই অনীহা আরও বেশি। সরেজমিন রাজধানীর একাধিক হাসপাতালের কভিড ও নন-কভিড ওয়ার্ড ঘুরে মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব কিছু শিথিল হলেও সবাইকে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাসপাতালের মতো জায়গায় সবসময় সংক্রমণ ছড়ানোর পরিবেশ থাকে। অসুস্থ ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানা না হলে করোনা ঝুঁকি হতে পারে মারাত্মক।
গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ভেতরে ও চত্বর এলাকায় দেখা গেছে, সেবা নিতে আসা রোগী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেশিরভাগই মাস্ক পরার বিষয়ে উদাসীন। অনেকের মুখে নেই মাস্ক, কারও কারও থাকলেও তা থুতনির নিচে। অনেকেই বলছেন, হাসপাতালের তরফ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার দুর্বল নির্দশনার কারণেই অধিকাংশ মানুষ মানছেন না। হাসপাতালের বহির্বিভাগ, নতুন ভবনের করোনা ইউনিটেও এমন পরিস্থিতি। করোনা টিকাদান কেন্দ্রেও এমন চিত্র দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীর মুখেও ছিল না মাস্ক।
একই চিত্র শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের। এই হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ২০৯ নং কভিড ইউনিটের কেবিন ওয়ার্ডগুলোতে রোগী ও স্বজন অনেককেই মাস্ক ছাড়া দেখা যায়। দায়িত্বরত নার্স, ওয়ার্ড বয়-আয়াদের অনেকের মাস্ক ছিল থুতনির নিচে। জানতে চাইলে তারা বলেন, গরমে মাস্ক পরে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাছাড়া সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। তাই আগের মতো মাস্ক ছাড়া কাজ করতে ভয় লাগে না।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে দেখা যায় আরও খারাপ অবস্থা। বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষেও বেশ কয়েকজন রোগী, ব্রাদার ও ওটিবয় মাস্কবিহিন ছিলেন। একাধিক ওয়ার্ড ঘুরে চিকিৎসক-নার্স ছাড়াও হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের প্রায় ৮০ শতাংশকেই মাস্ক ছাড়া দেখা যায়। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন সমকালকে বলেন, হাসপাতালগুলো থেকে সংক্রমণ বেশি ছড়ায়। সংক্রমণ ছড়ানোর যতগুলো উৎস, তার মধ্যে প্রথমেই আসবে হাসপাতালের নাম। তাই এখানে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে রোগী এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য ভাইরাস বহন করে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, মাস্ক পরলে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তবে গোটা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকেই মাস্ক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে সপ্তাহিক সভাগুলোতে এসব বার্তা সবসময়ই দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই বার্তাগুলো সিভিল সার্জনের মাধ্যমে সারাদেশে বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ, যারা হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন, তাঁদেরও মাস্ক পরার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। সরকারের দেওয়া এই নির্দেশনা চলমান। এটি যাতে আরও ভালোভাবে কার্যকর করা যায়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এ দিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ১০টি নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৬২০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন শনাক্ত। এর আগে ১৯ জুন এর চেয়ে কম শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই দিন ৫৯৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ; যা গত ৩৪ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন শনাক্ত হার। গত ১৮ জুন শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন শনাক্তদের নিয়ে দেশে করোনা রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ২০ লাখ ৮৯৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মারা গেছেন ২৯ হাজার ২৫৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৭৬৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৯ জন।
মন্তব্য করুন