ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করার দাবি

জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করার দাবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন - পিআইডি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২২ | ১৪:২৪

তদন্ত কমিশন গঠন করে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী ও কুশীলবদের চিহ্নিত ও বিচারের মুখোমুখি করার জোরালো দাবি তুলে ধরার মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এই মহান নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে দেশজুড়ে আয়োজিত নানা কর্মসূচিতে।

জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয়েছে এসব আয়োজনে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি এবং স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদীদের প্রতিহত করার শপথ উচ্চারিত হয়েছে লাখো কণ্ঠে।

সূর্যোদয়ের ক্ষণে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত, মিলাদ, দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন স্থানে পোস্টার মুদ্রণ ও স্থাপন এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এদিন ছিল সরকারি ছুটি।

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার এবং জাতির পিতার প্রতি রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতাসহ পঁচাত্তরের শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এরপর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে আরেকবার পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে যান। সেখানে ঘুরে ঘুরে স্মৃতিচিহ্ন দেখেন তিনি। পরে ভবনের একটি কক্ষে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও শহীদদের জন্য দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, শাজাহান খান, এএইচএম খায়রুজ্জমান লিটন, মাহবুবউল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, হাবিবুর রহমান সিরাজ, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আমিনুল ইসলাম আমিন, সায়েম খান প্রমুখ।

পরে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে গিয়ে মা-ভাইসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। সেখানে ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কবরস্থান মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার ও রাষ্ট্রীয় সালাম দেওয়া হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেও যোগ দেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমানসহ যারা হত্যাকাণ্ডের প্রধান কুশীলব, তাদের বিচার হয়নি। জাতির প্রত্যাশা হচ্ছে, একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রধান কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানার জন্য তাদের মুখোশ উন্মোচন করা। সেই লক্ষ্যে এবং বঙ্গবন্ধুর যে খুনিরা বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার জন্য সরকার কাজ করছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ এবং বনানী কবরস্থান সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। দুই জায়গাতেই শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। একে একে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদের হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানরা শোক মিছিল করে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠনসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া বনানী সেনানিবাস কবরস্থানে ১৫ আগস্টের আরেক শহীদ বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদের কবরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

বাদ আসর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সিপিবি, বাংলাদেশ জাসদ, তরীকত ফেডারেশন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি, সংসদ সচিবালয়, সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, পদ্মা ব্যাংক, বিএমএ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, রিহ্যাব, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং আদ-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা অয়োজনে জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদন :জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি। এতে অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম, আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, ভানুরঞ্জন চক্রবর্তী, আইয়ুব ভূঁইয়া, রেজানুর রহমান ও শাহনাজ সিদ্দিকী সোমাসহ ক্লাবের সদস্যরা।

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের আহ্বায়ক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে প্রেস ক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন

×