পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ভারতীয় আমলাদের কারণে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত সে দেশের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) বা ঋণ সহায়তার প্রকল্পে অগ্রগতি নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমলারাও দায়ী। এলওসির ঋণ অনেকটা আমলানির্ভর। ভারতের কর্মকর্তারা বলে থাকেন, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা তাঁদের সহযোগিতা করেন না। বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও পাল্টা অভিযোগ করেন। অবশ্য পরিকল্পনামন্ত্রী আশা করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান সফর এ ঋণের অর্থ ছাড়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

মঙ্গলবার উন্নয়নবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত উন্নয়ন সংলাপে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবির সভাপতি হামিদ-উজ-জামান মামুন। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ৪৬টি উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের নমনীয় ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ভারতের। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় দেওয়া ওই প্রতিশ্রুতির মধ্যে গত এক যুগে মাত্র ১০০ কোটি ডলারের মতো ঋণ ছাড় হয়েছে। ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত ৪৬টি প্রকল্পের ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আইএমএফের কিছু শর্ত সরকার পূরণ করেছে। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফের কোনো শর্ত নেই। সরকারি ব্যয় কমানো ও স্বচ্ছতা এবং ডলারের বিনিময় হার উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে আইএমএফের পরামর্শ রয়েছে। বাংলাদেশ আইএমএফের সদস্য। কোনো সদস্য বিপদে পড়লে আইএমএফ ঋণ, উপদেশ ও সহযোগিতা দেবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে বন্ধুর মতো, মহাজনের মতো নয়।
এম এ মান্নান বলেন, সরকার আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চেয়েছে। অর্থনীতি বড় হয়েছে। অর্থের ক্ষুধা আছে। এ কারণে আগের তুলনায় বেশি ঋণ চাওয়া হয়েছে। আইএমএফের অর্থ পাওয়া গেলে অনেক বড় সহায়তা হবে। ঋণ দিতে আইএমএফ নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
অক্টোবর থেকে মূল্যস্ফীতি কমবে: পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ২০ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে। আমনের ফসল চলে আসবে। সব মিলিয়ে অক্টোবর থেকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। তবে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতি বেশি থাকতে পারে। আগস্টের মূল্যস্ফীতি পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে আসার পর তাঁকে দেখিয়ে মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। মন্ত্রী বলেন, 'বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আমরা প্রায় খাদের কিনারে পড়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাগাম টেনে ধরেছেন। এতে অনেক ক্ষতি থেকে বাঁচা গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ হলে সরকার খুশি। ডলারের দর ১০০ টাকার মধ্যে থাকলে এ অর্জন কঠিন হবে না। তবে এর চেয়ে বেশি হওয়া কিংবা ১১০ টাকায় চলে যাওয়া ভয়ংকর ব্যাপার।'
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, 'সামাজিক স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতা দরকার। এটি না থাকলে আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংক কেউ আমাদের বাঁচাতে পারবে না।' দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব সমাজেই দুর্নীতি হয়। তবে বাংলাদেশে দুর্নীতি স্পষ্ট এবং দৃশ্যমান। এর প্রধান কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য। দারিদ্র্য কমলে দুর্নীতিও কমে আসবে। বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে দুর্নীতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। সুনির্দিষ্ট করে প্রকল্পের দুর্নীতি কমানো এবং সময়মতো মানসম্পন্ন বাস্তবায়নে আইএমইডিকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। শক্তিশালী আইন ও তার প্রয়োগ প্রয়োজন। মন্ত্রী হিসেবে নিজের ব্যর্থতা কী মনে করেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে এম এ মান্নান বলেন, তিনি চেয়েছিলেন প্রকল্প পরিচালকরা যাতে প্রকল্প এলাকায় থাকেন এবং এক প্রকল্প যাতে একজন প্রকল্প পরিচালকই শেষ করতে পারেন। যা নিশ্চিত করা যায়নি।