বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি নিয়ে ফিরে যাওয়ার আশা করবেন, যা ২০২৩ সালের শেষের দিকে পরবর্তী নির্বাচনে তাঁকে ভালো অবস্থানে দাঁড় করাতে পারে।

গত মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে ভারতের উচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করা। এই বিবৃতিতে উভয়পক্ষের মুখ লাল হয়ে গিয়েছে এবং মন্ত্রী দিল্লিতে শেখ হাসিনার প্রতিনিধি দলে জায়গা পাননি।

এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হলে ভারত খুব খুশি হবে। কারণ ২০০৯ সাল থেকে তাঁর শাসনকালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সর্বোত্তম পর্যায়ে রয়েছে। ইসলামী জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান এবং ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় দিতে তাঁর সরকারের অস্বীকৃতি সহযোগিতার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে।

অবশ্য সম্পর্ক সমস্যামুক্ত হয়নি। আসামে নাগরিকত্বের জাতীয় নিবন্ধন এবং নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন ঢাকায় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে ক্ষতি সামাল দেওয়ার জন্য বিষয়টি কূটনীতির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ভারতের ভ্যাকসিন কূটনীতি এ সময় নিরাময় এনে দিয়েছিল। এটি মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরিপকস্ফতা, আঞ্চলিক গতিশীলতা সম্পর্কে তাঁর সূক্ষ্ণ বোধগম্যতা এবং বৃহৎ ছবি দেখার তাঁর ক্ষমতার কারণে সম্ভব হয়।

শেখ হাসিনা ভারত-চীনের ভারসাম্যও কৌশলে নির্ধারণ করেছেন। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকায় এসে তাঁর দেশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেন।

নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনার সফর দিল্লিকে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ দেবে। তবে ভারত এবং বাংলাদেশ বলতে পারে যে, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে সর্বোত্তম আন্তঃসীমান্ত সংযোগ রয়েছে তাদের। পাইপলাইনে রয়েছে আরও পরিকল্পনা।

ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ। ভুটান এবং নেপালের মতো তৃতীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারতীয় বন্দর দিয়ে সম্পন্ন করা যায়।

তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আসলেই যা চান তা হলো, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছে চুক্তিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থক এবং বিরোধীরা উভয়েই নজর রাখছেন যে, তাঁর এই সফরে এসব গুরুত্বপূর্ণ দাবি পূরণ হয় কিনা। ভারতকে তাই অবশ্যই বাংলাদেশের সত্যিকার বন্ধু হতে হবে।