- বাংলাদেশ
- স্ত্রী হত্যার ১৬ বছর পর গ্রেপ্তার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত স্বামী
স্ত্রী হত্যার ১৬ বছর পর গ্রেপ্তার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত স্বামী

ছবি- সংগৃহীত।
যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যার পর ১৬ বছর গাজীপুরে আত্মগোপনে ছিলেন বগুড়ার উজ্জ্বল প্রামাণিক। এর মধ্যে তিনি আবারও বিয়ে করেন। সম্প্রতি স্ত্রী হত্যা মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। তখন তিনি ঠিকানা বদলে চলে যান ঢাকার আশুলিয়ার এক বাসায়। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাব-৩-এর একটি দল সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ২০০৬ সালের জুনে আলো বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় উজ্জ্বলের। তখন যৌতুক দাবি করায় তার শ্বশুর আকবর আলী শেখ ৩০ হাজার টাকা দেন। তবে বিয়ের এক মাস পর তিনি আবারও বিদেশ যাওয়ার নামে যৌতুক হিসেবে ৫০ হাজার টাকা চান। এর আগে দেওয়া যৌতুকের টাকা তাঁর মা, ভাই ও ভগ্নিপতি আত্মসাৎ করেছেন বলেও জানান। বিষয়টি মীমাংসার জন্য দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সালিশ বসে। এ সময় উজ্জ্বলের পরিবারের সবাই যৌতুক বাবদ আরও ৫০ হাজার টাকার দাবিতে অনড় থাকেন। আলোর বাবা যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা তালাক দেওয়ার ভয় দেখান। সালিশে বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যাওয়ার পর থেকে উজ্জ্বল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আলোকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ আরও জানান, ২০০৬ সালের ১ আগস্ট উজ্জ্বলের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন লাবু ভুক্তভোগী আলোর পরিবারকে মোবাইল ফোনে জানান, তাঁদের মেয়ে গুরুতর অসুস্থ। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন আলোর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘরের মেঝেতে তার লাশ দেখতে পান। এ ঘটনায় উজ্জ্বল, তাঁর মা আলেয়া বেওয়া, ভাই হিরা প্রামাণিক, বোন লাভলী বেগম ও ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন লাবুর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে বগুড়া সদর থানায় মামলা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৪ জুলাই বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল উজ্জ্বলকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অন্য চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁদের খালাস দেন আদালত।
র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর উজ্জ্বল তাঁর মা আলেয়া বেওয়াকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় এসে পরিচয় গোপন রেখে জীবনযাপন শুরু করেন। স্থানীয় একটি আসবাবের দোকানে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিতে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ নেন। পালিয়ে আসার ছয় মাস পর নাছিমা খাতুন নামে এক পোশাক শ্রমিককে বিয়ে করেন। তাঁদের ১০ ও তিন বছর বয়সী দুই ছেলে রয়েছে। পালিয়ে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত উজ্জ্বল তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে কিছু দিন আগে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, হত্যা মামলায় তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। তখন তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় গিয়ে ওঠেন। এর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
মন্তব্য করুন