করোনার ধকল কাটিয়ে সুস্থ্থ হয়ে উঠছে পৃথিবী; বাড়তে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা প্রায়ই যাচ্ছেন বিদেশ সফরে। সাম্প্রতিক সময়ে মন্ত্রিসভার প্রায় অর্ধেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আছেন বিদেশ সফর-সংক্রান্ত ব্যস্ততায়। বর্তমান মন্ত্রিসভায় রয়েছেন ৪৮ জন সদস্য। এর মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী ২৫, প্রতিমন্ত্রী ২০ ও উপমন্ত্রী আছেন তিনজন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ও মন্ত্রীদের ভ্রমণসূচি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার ভারতের বেঙ্গালুরুতে গেছেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। 'এশিয়ান সামিট অন এডুকেশন অ্যান্ড স্কিলস' শীর্ষক অনুষ্ঠান শেষে ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এ ছাড়া অক্টোবরে আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তাঁর থাইল্যান্ডে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই অনুষ্ঠানের ভ্রমণসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) কাউন্সিলে যোগ দিতে কানাডা সফরে যাচ্ছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রতিমন্ত্রী কবে দেশ ছাড়বেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে বেশি ব্যস্ততা যাচ্ছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের। সেনেগালে সরকারি সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফিরেছেন তিনি। এরই মধ্যে আরও দুটি দেশ সফরে যাচ্ছেন তিনি। শাহাব উদ্দিন মালদ্বীপে উড়াল দিয়েছেন গতকাল মঙ্গলবার। এর পরপরই তাঁর নেপাল সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। একই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের আগামী ৩ অক্টোবর নাইজেরিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী সোমবার মেক্সিকো যাচ্ছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সেখান থেকে দেশে ফিরতে পারেন অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আগামী ১ অক্টোবর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল আগামী ৩ অক্টোবর চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে ভারত যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর আজ বুধবার ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সময় নির্ধারিত আছে। তিনি 'ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ ফর নন-রেসিডেন্টস বাংলাদেশ নেশনস' শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডা হয়ে তাঁর ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তিনি দেশে ফিরতে পারেন আগামী রোববার। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের আগামীকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে দেশটিতে যাচ্ছেন। দেশে ফিরতে পারেন ১ অক্টোবর। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীও এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তিনি কবে ফিরবেন, তা জানা যায়নি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আগামী শনিবার এডিবির বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় যাওয়ার তারিখ নির্ধারিত আছে। সফর শেষে ১ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরতে পারেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির আগামীকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার তারিখ নির্ধারিত আছে। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করায় এ সফর বাতিল হতে পারে বলে জানা গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে গেছেন গত শনিবার। 'এশিয়া প্যাসিফিক মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স অন রিস্ক রিডাকশন' শীর্ষক এ সম্মেলন শেষে আগামী শনিবার তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী গত শনিবার ইংল্যান্ড সফরে গেছেন। সেখানে সরকারি কোনো কর্মসূচির সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত এ সফর শেষে কবে দেশে ফিরবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বহুজাতিক একটি কোম্পানির আমন্ত্রণে গত রোববার থাইল্যান্ড গেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সফরের সম্পূর্ণ খরচ ওই কোম্পানি বহন করবে। এ সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) একটি সম্মেলনে অংশ নিতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা যাচ্ছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের আইএইএর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইয়াফেস ওসমান ঠিক কবে যাচ্ছেন, তা নিশ্চিত জানা যায়নি। এদিকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে কানাডার একটি সম্মেলনে যোগ দিতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের দেশ ছাড়ার কথা রয়েছে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরবেন। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের আগামী ১০ অক্টোবর মিসর সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ সফরের ভ্রমণসূচি এখনও নির্দিষ্ট হয়নি।

এবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সফরসঙ্গী করার ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রনীতি নিতে দেখা গেছে। অন্যান্য বছর বার্ষিক এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে অন্তত ৮ থেকে ১০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকতেন। এবার সেই তালিকা কাটছাঁট করে গেছেন চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

সচিবালয় সংশ্নিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে আছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারিভাবে বিদেশ সফর কমানোর আদেশ জারি করে সরকার। এরপরও সরকারি ও বেসরকারি আয়োজনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিদেশ সফর হচ্ছে। মন্ত্রণালয়-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাই নন, করোনা-পরবর্তী সময়ে বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন সংসদ সদস্যরাও। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিদেশ সফর আয়োজনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহেও একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মিশন সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর যেখানে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা কাজ করছেন সেসব দেশে যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।