রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় বাসু মিয়া হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত মো. আলকেস ছদ্মবেশে ১০ বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। আসল পরিচয় গোপন করে কখনও শ্রমিক, কখনও বালুর ব্যবসা, কখনও ট্রাক চালক হিসেবে কাজ করেন। এমনকি আত্মগোপনে থাকার সময়ই বিরোধের জের ধরে সহযোগী আজহার ও সানুকে হত্যা করেন। অবশেষে শুক্রবার বরিশাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

এতে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানান, জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ১৪ মে বিকেলে শাহ আলীর চটবাড়ীর নবাবেরবাগ এলাকায় বাসুর ওপর আক্রমণ চালানো হয়। আলকেস ছাড়াও ওই দলে ছিল আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী ও লেদুসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ছয়-সাতজন। তারা আগ্নেয়াস্ত্র, ধারাল অস্ত্র ও রড নিয়ে হামলে পড়ে। একপর্যায়ে আলকেস অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। বাসুর মাথার বাম পাশে গুলি ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার ভাই চিনু মিয়া বাদী হয়ে আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে শাহ আলী থানায় মামলা করেন। 

তিনি আরও জানান, পরের তিন মাসে অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন আলকেস নিজেকে জড়িয়ে এবং অন্য আসামিদের নাম উল্লেখ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। চার মাস কারাভোগের পর সে জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। বিচার শেষে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আলকেসসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং কদর আলী ও লেদুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

র‍্যাবের এ অধিনায়ক জানান, জামিনে বের হওয়ার পর আলকেস প্রথমে এলাকায় অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করে। এর একপর্যায়ে বাসু হত্যা মামলার আসামি আজহার ও সানুর সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। তখন সে সাভার এলাকায় দু'জনকেই নির্মমভাবে হত্যা করে। ওই মামলায় সে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি। অবৈধভাবে বালু তোলা ও সংরক্ষণ করায় পরিবেশ অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে মামলা করে। এ মামলাতেও সে পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি। এ ছাড়াও শাহ আলী থানার ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য সে আত্মগোপনে চলে যায়। 

তিনি জানান, বারবার ঠিকানা ও পেশা বদলে সে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে। প্রথমদিকে সে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। পাশাপাশি ডাকাতিও করত। পরে বরিশাল গিয়ে প্রথমে ট্রাকের হেলপার ও পরে চালক হিসেবে কাজ করে। বেপরোয়াভাবে বাস চালানের সময় সিলেটে তার বাসের নিচে চাপা পড়ে একজন মারা যায়। এই ঘটনায় সিলেটের ওসমানীনগর থানায় পরিবহন আইনে তার বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা হয়। এ ঘটনার পর সে পালিয়ে কুয়াকাটায় গিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করে। তখন মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতিও করে সে। সর্বশেষ গত দেড় বছর একটি দূরপাল্লার পরিবহনের চালক হিসেবে কাজ করে আসছিল।