বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতা, সুশাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন চায়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এ দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শ্রমমান উন্নয়নে আরও সহায়তা দেওয়া হবে। এ দেশে মার্কিন বিনিয়োগও বাড়বে। অন্যদিকে, ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের উন্নয়ন হলে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উন্নয়নের পরও বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে ইইউর দেশগুলোতে। গতকাল মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন
দুই রাষ্ট্রদূত। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। ইইউ রাষ্ট্রদূত ছিলেন বিশেষ অতিথি। আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ুন রশীদের সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়েও ওপর গুরুত্ব দেয় তাঁর দেশ। প্রথমত, শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, প্রতিশ্রুত গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতা, স্বচ্ছতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা। তৃতীয়ত, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন। চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরা পর্যন্ত তাদের আশ্রয় দেওয়া। পঞ্চমত, এ চার লক্ষ্য সার্থকভাবে পরিপালন করলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শ্রমমান উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়া। তিনি মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ভিত্তিতে এসব অর্জন সম্ভব।

পিটার হাস বলেন, একক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পণ্যের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) সবচেয়ে বেশি। এ দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ এখন বড় বাজার। তবে বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ প্রস্তুত কিনা, তা বড় প্রশ্ন। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশি আকর্ষণীয় কিনা- মার্কিন উদ্যোক্তাদের তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক অঞ্চল বিদেশি বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট নয়। পানি, বিদ্যুৎ এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতির ধারাবাহিকতা, প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ, নিরাপত্তা ও নিজ দেশে মুনাফা নিয়ে যেতে পারার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সহযোগিতা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে বিজনেস কাউন্সিলসহ দু'দেশের মধ্যকার উচ্চ পর্যায়ে সংলাপের কথা জানান তিনি।

ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইইউ এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য অবারিত। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর 'জিএসপি প্লাস' পেতে ৩২টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুমোদন করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ, মানবাধিকার, শ্রম অধিকারের মতো বিষয় রয়েছে এর মধ্যে। আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশের এসব বিষয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখবে ইইউ। সন্তোষজনক অগ্রগতি হলে ইইউতে পণ্য রপ্তানিতে বর্তমানের মতো শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেতে সমস্যা নেই। এফডিআই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুল্ক্ক, কর কাঠামো এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও ব্যবসা সহায়ক হওয়া প্রয়োজন। সংশ্নিষ্টদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয়ে সতর্ক হলে এ দেশে ইইউভুক্ত দেশের এফডিআই আরও বাড়বে। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়া যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, এ বিষয়ে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের খাদ্য আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

আইবিএফবি সভাপতি বলেন, আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে শক্ত অবস্থানের জন্য বাংলাদেশে আরও বেশি এফডিআই প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশের উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার এখন উপযুক্ত সময়। এতে অর্থ পাচার কমবে। দেশের ব্র্যান্ড ইমেজে বাড়বে। জায়েদী সাত্তার পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর পরামর্শ দেন। আইবিএফবির সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।










বিষয় : গণতন্ত্র ও সুশাসনে জোর আইবিএফবির আলোচনা সভা

মন্তব্য করুন