ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা বাড়ছেই। গত ১৬ আগস্ট দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১২৮ রোগী। আর গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে ভর্তি হয়েছেন ৪৬০ জন। এই সময়ে ধাপে ধাপে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। গতকাল দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন ১ হাজার ৭৩৮ জন; আর চলতি বছরে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৪ হাজার ৮২২ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত জুনে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরের মাস জুলাইয়ে মারা যান ৯ জন। আগস্টে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আর গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৪ জন। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর ভয়াবহতার আভাস আগে দিলেও সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো তা আমলে নেয়নি। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি তারা। তাদের উদাসীনতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার সমকালকে বলেন, আগেই সতর্ক করেছিলাম, এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু সেটা আমলে না নিয়ে সিটি করপোরেশন গতানুগতিকভাবে কাজ করছে। এখন যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে অবস্থার উন্নতি হতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন লাগবে। তিনি বলেন, ঢাকার সব জায়গায় ডেঙ্গু রোগীর হার সমান নয়। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি, সেখানে মশক নিধনে এক দিনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে। মাইকিং, জনসচেতনতা, ওষুধ ছিটানো- সবকিছু একসঙ্গে করতে হবে। কিন্তু সেটা না করায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, ঢাকার দুই সিটি

করপোরেশনের সাড়ে ১২ শতাংশ বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার অস্তিত্ব রয়েছে। আর ২৭টি ওয়ার্ড অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু তার পরও ঢাকার কোনো সিটি করপোরেশনই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম তেমন জোরদার করেনি।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে এজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, অঞ্চলে অঞ্চলে কার্যক্রম চলছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ শিগগিরই কমতে শুরু করবে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে তালিকা দেওয়া হচ্ছে তা ভুলে ভরা। যেসব রোগীর তালিকা দেওয়া হচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে সাত-আটজন রোগীর ফোন নম্বর একই। আমরা তালিকা বাছাই করে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন রোগী পাচ্ছি। তবে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রায় একই কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ চিরুনি অভিযান ছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। এজন্য নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। 

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে :স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের হাসপাতালগুলোতে ৪৬০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৩২০ জনই ঢাকায়। সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ১ হাজার ৭৩৮ জনের মধ্যে ১ হাজার ৩১৪ জনই ঢাকায়। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও এক ডেঙ্গু রোগী। গত মে মাসে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৬৩ জন, জুনে ৭৩৭ জন, জুলাইয়ে ১ হাজার ৫৭১ জন, আগস্টে ৩ হাজার ৫২১ জন। আর সেপ্টেম্বর মাসে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৬৪১ জন।