- বাংলাদেশ
- কর্মকর্তাদের পেটে বেকারদের আড়াই কোটি টাকা
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর
কর্মকর্তাদের পেটে বেকারদের আড়াই কোটি টাকা

তরুণ-তরুণীদের বেকারত্ব দূরীকরণে সরকার ২০১০ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে চালু করে 'ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি'। গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে এই কর্মসূচির প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। বেকারদের না দিয়ে টাকাগুলো যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা 'ব্যক্তিগত কাজে' ব্যবহার করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে টাকা নড়চড়ের সত্যতা মিললেও কাদের পকেটে ঢুকেছে, তা চিহ্নিত হয়নি। তবে সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ-সংক্রান্ত প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, সিলেটের জকিগঞ্জের স্থানীয় অ্যাকাউন্টস অফিস, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংঘবদ্ধ একটি চক্র এ কাজ করেছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির অর্থ ছাড়ে নিশ্চিতভাবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন নিতে হয়। লাগে মন্ত্রণালয়ের হিসাব বিভাগের অনুমোদন। যেসব উপজেলায় টাকা যায়, সেখানেও অধিপ্তরের মহাপরিচালকের সম্মতির পরই শুধু পৌঁছে। একাধিক ধাপে ছাঁকনির ব্যবস্থা থাকার পরও এত বড় অঙ্কের টাকা কীভাবে বেহাত হলো, তার সদুত্তর মিলছে না। সবাই বলছেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এরই মধ্যে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় গেল অর্থবছরে ১১টি উপজেলায় টাকা যাওয়ার কথা। এগুলো হলো- রংপুরের মিঠাপুকুর, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, পাবনার বেড়া, যশোরের বাঘারপাড়া, ফরিদপুরের সালথা, কক্সবাজারের মহেশখালী, পটুয়াখালী সদর, মাদারীপুরের শিবচর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা। এর বাইরে অন্য কোনো উপজেলায় টাকা যাওয়ার সুযোগ নেই। তার পরও সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় ২ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা গেছে। সেই টাকা উঠিয়ে খরচও হয়েছে বলে কর্মসূচি পরিচালক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ডিজির কাছে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন সমকালকে বলেন, 'অডিটে এমন একটি ঘটনা ধরা পড়েছে। ২ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা ঠিক হবে না।'
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান বলেন, 'টাকা কীভাবে সেখানে গেল, তা নিয়ে আমরাও বিস্মিত। অনেক সময় আইবাস++ এ কারিগরি ত্রুটি হয় বলে আমরা শুনেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ছাড়া এখন নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।'
মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপসচিব ফজলে এলাহী বলেন, তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠি পেয়েছি। এখনও কাজ শুরু করতে পারিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করে দেখি কত দিন লাগে।
প্রাথমিক প্রতিবেদন :সিলেটের জকিগঞ্জে অপ্রত্যাশিতভাবে টাকা যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে অডিটে। বিষয়টি নজরে আসার পর ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সেলের পরিচালক খোন্দকার রুহুল আমীন এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন যুব উন্নয়ন অধিপ্তরের মহাপরিচালকে দেন।
এতে বলা হয়েছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বিপরীতে কল্যাণ অনুদান খাতে আইবাস++ এ ২ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা এন্ট্রি দেওয়া, উত্তোলন ও ব্যয় করা রীতিমতো আর্থিক বিধিবিধান পরিপন্থি, গর্হিত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই সংঘবদ্ধ চক্রে যারাই জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছেন কর্মসূচি পরিচালক।
মন্তব্য করুন