বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে সংঘটিত ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া মামলাটিতে ঢাকার বিচারিক আদালতে রায় হয় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর। এতে বিচারক ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে এতদিনেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের শেষ আইনি ধাপ ডেথ রেফারেন্স শুনানিই শুরু করা যায়নি।

মামলা-সংশ্নিষ্টরা জানান, ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন আসামিরা। রাষ্ট্রপক্ষও বিধি অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) আবেদন করেছে। তবে শুনানি এখনও হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলার পেপারবুক (এজাহার, রায়সহ যাবতীয় বৃত্তান্ত) তৈরি হলেই শুনানি শুরু করা যায়। তবে তা এখনও তৈরি হয়নি।

আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী, কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল শুনানি ও তা নিষ্পত্তি হতে হয়। আর ডেথ রেফারেন্স শুনানির আগে পেপারবুক তৈরি করতে হয়। একটি মামলায় অন্তত ৮ থেকে ১২টি পেপারবুক লাগে। প্রতিটি পেপারবুক সাধারণত কয়েক হাজার পৃষ্ঠার হয়ে থাকে, যা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধায়নে বিজি প্রেস (বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রেস) থেকে ছাপানো হয়। উচ্চ আদালতে বর্তমানে ২ হাজারের বেশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির প্রায় সাড়ে ৮০০ ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

আবরার হত্যা মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর সমকালকে বলেন, হত্যা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য কিছু প্রক্রিয়া আছে। বিশেষ করে পেপারবুক তৈরি করতে হয়। আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক তৈরির জন্য বলেছি। এটি তৈরি হলেই রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির উদ্যোগ নেবে।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার সাইফুর রহমান বলেন, পেপারবুক তৈরির কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে সেটি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, আবরার হত্যা মামলার পেপারবুক তৈরি এখনও শুরু হয়নি।

এদিকে দ্রুত আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে আসামিদের দণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন আবরারের পরিবার ও স্বজন। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ সমকালকে বলেন, জজকোর্টে রায় হয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টে শুনানিই শুরু হচ্ছে না। রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিলে সেটি হতে পারে। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেও দ্রুত শুনানির জন্য অনুরোধ করেছি। এখন উচ্চ আদালতে যাতে বিচারিক আদালতের রায়টি বহাল থাকে, আমরা পরিবার সেটাই চাচ্ছি।

আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। পরদিন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। একই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- মেহেদী হাসান রাসেল, মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারফ সকাল, মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুল ইসলাম, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মাহমুদুল জিসান, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মুজতবা রাফিদ এবং মাহামুদ সেতু।