- বাংলাদেশ
- এসডিজি বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত তথ্য নেই বাংলাদেশে
সেমিনারে বক্তারা
এসডিজি বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত তথ্য নেই বাংলাদেশে

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত তথ্য নেই বাংলাদেশের কাছে। ইতোমধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে পার হয়ে গেছে অর্ধেক সময়। আগামী সাত বছরের মধ্যে নির্ভরযোগ্য, হালনাগাদ ও মানসম্পন্ন তথ্য সংগ্রহ করে সরকার কীভাবে সমাজের অন্তর্ভুক্তিমূলক এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এসডিজি নিয়ে এক সেমিনারে এমনটাই বলেন বক্তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিয়ে 'বাংলাদেশ জার্নি টু এসডিজি: ফর্ম নেগোসিয়েশন টু ইমপ্লিমেন্টেশন' শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ।এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও সম্মানিত অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এএসএম আলি আশরাফ এসডিজি নিয়ে ভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহম্মদ রুহুল আমিন, অধ্যাপক মাইনুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরীসহ অন্যরা। স্বাগত বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর আসাদ আলম সিয়াম। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, শিক্ষাবিদসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থায়ন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বিশেষ বৈঠকের আহ্বানে জাতিসংঘকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সাউথ সাউথ কো-অপারেশন নিয়ে বৈঠকের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানিয়ে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এর বাস্তবায়ন চাই। এসডিজিতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রতিবন্ধী শিশুদের সুরক্ষা ও জনগণের ক্ষমতায়ন। আমাদের এসব প্রস্তাব এসডিজিতে অনুমোদিত হয়। এসডিজির অর্থায়ন একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতির অনেক তথ্য নেই। এখানে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের এসব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের তৃতীয় পর্যায়ের অগ্রগতি প্রতিবেদন দ্রুত করতে হবে। আশা করি, আগামী জুনের মধ্যে এটা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে ব্যবসায়িক, এনজিও সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়েও এসডিজি অর্জনে কাজ করতে হবে। আর এসডিজির অর্থায়নে প্রয়োজন নতুন সমীক্ষা।
অধ্যাপক মাইনুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘে গৃহীত এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রায় ১৬৯ টার্গেট এবং ২৩১ সূচক রয়েছে। ২০১৬ সালে নেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের অর্ধেক সময় শেষ হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সব দেশকে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার ২৩১টি সূচকের মধ্যে ৩৯টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এসডিজি বাস্তবায়নে ২৩১টি সূচকেই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন ৩৯টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এ ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে বাংলাদেশে এর পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তবে কিছু লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ তথ্য পাওয়া যায়। জলবায়ু নিয়ে লক্ষ্যমাত্রার ১২, ১৬ এবং ১৭-এর অর্ধেকেরও কম তথ্য রয়েছে।
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, তথ্যের ফারাক এবং তথ্য দেওয়ার বিষয়ে দ্বিধা রয়েছে। ২০২১ নভেম্বর করোনার সময়ে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সরকারকে এ ধরনের ভালো কাজ সবার সামনে তুলে আনতে হবে। পুরো বিশ্বই সংকট মোকাবিলা করছে। তথ্যকে চাদরের তলে লুকানোর কিছু নেই। অন্য দেশে সরকারের বাইরে এসডিজি বাস্তবায়নে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে বাংলাদেশ সেটি করে না।
এ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এএসএম আলি আশরাফ বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের তথ্যকে সহজলভ্য করতে হবে। তথ্যের স্বচ্ছতা থাকতে হবে। তথ্য ছাড়া আমরা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বুঝতে পারব না। এ বিষয়ে আমাদের তথ্যের অনেক ফাঁক রয়েছে।
মন্তব্য করুন