উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছিল। বিপর্যয় শুরুর মুহূর্তে সঞ্চালন, বিতরণ ও ন্যাশনাল ডেসপাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) কর্মকর্তাদের গাফিলতি খুঁজে পেয়েছে এ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি। বিদ্যুৎ বিভাগে এই তদন্ত প্রতিবেদন আজ রোববার জমা দেওয়া হবে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, দুই-একদিনের মধ্যে বিপর্যয়ে জড়িতদের চাকরিচ্যুত করা হবে।

গত ৪ অক্টোবর দেশে গ্রিড বিপর্যয় ঘটে। ওই দিন ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের ৩২ জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ঘটনার পর নির্বাহী পরিচালক (পিঅ্যান্ডডি) ইয়াকুব এলাহীর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে বিদ্যুৎ বিভাগও একটি কমিটি গঠন করে। গত শুক্রবার দুই কমিটি বৈঠক করে নিজেদের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে। আজ তাদের প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগের জমা দেওয়া হতে পারে।

তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রিড বিপর্যয়ের সময় অর্থাৎ ৪ অক্টোবর দুপুরে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম ছিল। এ সময় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে চাহিদা কমানোর প্রয়োজন ছিল। ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকোকে সেই নির্দেশনা দিয়েছিল এনএলডিসি। কিন্তু সেই নির্দেশনা পালিত হয়নি। এ সময় চাহিদা মেটাতে পশ্চিমাঞ্চল থেকে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট সিরাজগঞ্জ-আশুগঞ্জ গ্রিড দিয়ে পূর্বাঞ্চলে আনা হচ্ছিল। পূর্বাঞ্চলের গ্রিডে সংযুক্ত ঘোড়াশাল সাবস্টেশনের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ১০০০ মেগাওয়াট। ঘটনার সময় সক্ষমতার চেয়ে বেশি সরবরাহের কারণে সাবস্টেশনটি বিকল হয়ে পড়ে। তখনই চট্টগ্রামে জাতীয় গ্র্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত একটি স্টিল কারখানা ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়া শুরু করে। অর্থাৎ একই সময়ে উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে একটি বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়, যা জাতীয় গ্রিডে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে।

এসব কারণে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ গ্রিডে ২৩০ কেভির (কিলোভোল্ট) দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশাল এআইএস (এয়ার ইনসুলেটেড সুইচ গিয়ার) থেকে ঘোড়াশাল জিআইএস (গ্যাস ইনসুলেটেড সুইচ গিয়ার) এলাকায় ২৩০ কেভি একটি সার্কিট ট্রিপ করে। এতে পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বৈদ্যুতিক সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে হুট করে বড় ঘাটতি দেখা দেয়। গ্রিডে সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায়। আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণে গ্রিডের ভারসাম্যহীনতা নষ্ট হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হতে থাকে। এতেই ব্ল্যাক-আউটের ঘটনা ঘটে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্রিড বিপর্যয়ের পেছনে ব্যবস্থাপনার ত্রুটি রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। বিদ্যুৎ বিভাগকে জড়িতদের নাম দিতে বলেছি। রবি বা সোমবারের মধ্যে বিপর্যয়ে জড়িত দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।