- বাংলাদেশ
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে: আইনমন্ত্রী
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে: আইনমন্ত্রী

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিতর্ক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। ছবি: সমকাল
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বাক স্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি, এটি জনস্বার্থেই হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর অপপ্রয়োগ হচ্ছে।’ আজ শনিবার রাজধানীর বনানীতে ঢাকা আর্ট গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিতর্ক’ বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি হয় ২০১৮ সালে। এরপর ২০১৯ সালে করোনা শুরু হওয়ার পরে দেখেছি এর কিছু-কিছু মিসইউজ হচ্ছে। সংবিধানে ১৯৭৫ সালের পর অনেক খেলাধুলা করা হয়েছে। কাজেই, যদি মনে করেন, এই আইন সাংবাদিকদের টার্গেট করে, তা নয়। যদি, এমন হয়, আপনাকে অপরাধের ভিত্তিতে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেক্ষেত্রে এই আইন জরুরি।’
বিভিন্ন দেশের আইন পর্যালোচনা করা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসেছি, আমরা একমত হয়েছি যে, এই আইনে মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকদের আগেই গ্রেপ্তার করা হবে না। যে কেউ মামলা করুক না কেন সেটাকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে না। এগুলো দেখার জন্য আইসিটি অ্যাক্টের একটি সেল আছে। এই অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কোনো ধারার মধ্যে পড়ে কিনা, সেটা দেখার পর যখন আদালতে কিংবা থানায় পাঠানো হবে তখনই এটা মামলা হিসেবে রুজু করা হবে। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। আমাদের কান বন্ধ নেই। আইনের অপব্যবহার সম্পর্কে আমরা সচেতন। লেখক মুসতাক আহমেদের মৃত্যুতে আমি মর্মাহত হয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এর জন্য বিশ্বের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে। আমি সংশ্নিষ্ঠ সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। জেনেছি, এটি একটা সাধারণ মৃত্যু।’
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিটরস গিল্ডের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। তিনি বলেন, ‘এ আইনের চার বছর হয়ে গেল। দুই বছর আগে এই আইনে আটক সাংবাদিক মুশতাকের মৃত্যু হয়। বন্ধ হয়ে গেছে কার্টুন। পত্রিকাগুলোতে প্রায় উঠে গেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। উপাত্ত সংরক্ষণ আইন এটি মানুষের ক্ষতি করবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এমন কথা বলছে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু।’
আলোচনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংস্কৃতিজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘আমি যদি নাটকে এমন কিছু দেখাই, মুচির চরিত্র, পুলিশের চরিত্র। যদি পুলিশের চরিত্র একটু নেগেটিভভাবে তুলে ধরা হয়, তখনই মামলা দিয়ে দিচ্ছে।’
সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, ‘আইনের একটা উদ্দেশ্য থাকে, সেটা হচ্ছে জনগণকে সুরক্ষা করা। এখন সেই আইন যদি জনগণকে তার স্বাধীনতা বন্ধ করতে চায়, তাহলে সেই আইন আর জনগণকে সুরক্ষা করতে পারে না।’
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এ আইনটা সময়োপযোগী আইন। সবাই বলছে এই আইন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে হয়েছিল। কিন্তু, এই আইনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৫ সালে। এ আইনের ধারা অনুযায়ী সাইবার বুলিং এর অভিযোগে ১৩ হাজার জনের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘অবিলম্বে এই আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করা হোক। সন্ধ্যার পর কেন আপনারা বাসায় যাবেন। আপনি রেইড করতে যাবেন, আমি হার্টের রোগী। আমার পাশে ছোট বাচ্চা, সে তো ভয় পাবে।’
চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সায়মান বলেন, ‘সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এই আইন অনুসরণ করা যাবে না। তার মানে, সাধারণ লোকজনকে এই আইনে জড়ানো যাবে। এই অ্যাপ্রোচ নিয়ে আমার আপত্তি আছে।’
মন্তব্য করুন