ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আজ সোমবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। সময় যতই গড়িয়েছে; বেড়েছে বর্ষণের মাত্রা। কখনও হালকা, কখনও মাঝারি; আবার কখনও ভারি; এভাবেই কেটেছে সকাল থেকে সন্ধ্যা। টানা বৃষ্টিতে নগরজীবনে নামে দুর্ভোগ। সকালে ঘর থেকে বেরিয়েই রাজধানীবাসীকে পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জনদুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল আরও ৮৫ মিলিমিটার। সব মিলিয়ে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অনেক সিএনজি অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার বিকল হয়ে পড়ে। নগরীতে দেখা দেয় গণপরিবহন সংকট। অফিস শেষে ঘরমুখো কর্মজীবীদের যেন ভোগান্তির শেষ ছিল না।

বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হওয়ার কারণে রাজধানীর ইসিবি চত্বর, গোলাপবাগসহ কয়েকটি স্থানে গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জলাবদ্ধতার সঙ্গে ওইসব এলাকায় দেখা দেয় যানজট। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে তৈরি হয় অস্বস্তিকর পরিবেশ। এ সুযোগে রিকশা ও অটোরিকশাচালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন উবার, পাঠাও, ওভাইয়ের মতো পরিবহন সেবাও বাড়িয়ে দেয় ভাড়া। তার পরও যানবাহনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়।

অনেক স্থানে রাস্তার খানাখন্দে রিকশা থেকে পড়ে যান যাত্রীরা। কাদাপানিতে একাকার হওয়ার পাশাপাশি আহত হতে হয় তাঁদের। নারী ও শিশুদের ভোগান্তি ছিল অস্বাভাবিক। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা তৈরি হয় রাজধানীর কাজীপাড়া এলাকায়। ভাঙাচোরা রাস্তা ও মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে জমে যায় কোমরপানি। এ ছাড়া গ্রিন রোড তলিয়ে যায় পানিতে।

জানা যায়, সোনারগাঁ সংলগ্ন হাতিরঝিলের স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় হাতিরপুল, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, কাঁঠালবাগানসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৫ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ ছাড়া মিরপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, মহাখালী, গুলিস্তান, আরামবাগ, সায়েন্স ল্যাব, পল্টন, মৎস্য ভবন এলাকায়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মিথুন চন্দ্র শীল জানান, রাজউককে বলার পর তারা হাতিরঝিলের তিনটি স্লুইসগেট খুলে দিয়েছে। সকাল থেকেই খুলে দিলে মানুষের এ ভোগান্তি হতো না।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার আরও বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দিনের ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই নগরবাসীকে যে ভোগান্তি পড়তে হয়েছে; মঙ্গলবার এ মাত্রা বাড়লে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা নিস্কাশনের সক্ষমতা রয়েছে। এর চেয়ে বেশি মাত্রায় হলে জলজট দেখা দেবে। অথচ গতকালের ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই রাজধানীর অনেক এলাকা তলিয়ে যায়।

অবশ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র আবু নাছের বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠে রয়েছেন। প্রতিটি অঞ্চলে একেকটি দল গঠন করা হয়েছে। যেসব এলাকায় পানি জমছে, সেখানকার ক্যাচপিট পরিস্কার করে দেওয়া হচ্ছে। পানি নিস্কাশনের প্রবাহ ঠিক রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র মকবুল হোসেন বলেন, মিরপুর এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। এর পর প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা সেগুলোর সমাধান করছেন। এ ছাড়া প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দিয়ে আঞ্চলিক দল গঠন করা হয়েছে। যখনই যে এলাকা থেকে অভিযোগ আসছে, তাঁরা সেটা সমাধানের জন্য ছুটে যাচ্ছেন।