শীতেও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ড
ছবি-সমকাল
তবিবুর রহমান
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:৩৫ | আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৭:১০
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শীত মৌসুমেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই ভাইরাস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৫ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১৪ জন, যা গত ২৪ বছরের মধ্যে জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু। গত বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হন ৫৬৬ জন, মৃত্যু হয় ছয়জনের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি নয়; কর্মকৌশল অনুযায়ী সারাবছর ডেঙ্গু নিধনে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তবে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে এখনও তৎপর নয়। বছরের শুরুতে ডেঙ্গু সংক্রমণ দেখে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে নাজুক হতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় কী– আমাদের সবার জানা, এখন শুধু উদ্যোগ নিতে হবে।
সাধারণত জানুয়ারিতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভার কম থাকে। বৃষ্টির মৌসুমে জুন মাসের দিক থেকে বাড়ে। মোটামুটি অক্টোবর মাস পর্যন্ত সংক্রমণের হার বেশি থাকে। তবে গত বছরের শেষ দিন এবং এ বছরও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃত্যুর তথ্য সংরক্ষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গুতে কারও আক্রান্তের তথ্য নেই। ২০১৪ থেকে ১৯ সাল পর্যন্ত জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একশর নিচে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১৯৯ জন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৩২ ও ২০২২ সালে ১২৬ জন আক্রান্ত হয়। গত বছর মোট মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন সমকালকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে শহর ও গ্রাম পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি কর্মকৌশল তৈরি করছে। এটি দ্রুত অনুমোদন দিয়ে মাঠ পর্যায়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পদক্ষপ নিতে হবে। তবে যেভাবে ডেঙ্গু বাড়ছে, সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা সেভাবে নেই।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বুঝতে লার্ভা বা শূককীট পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, দুই সিটিতে বিআই গত বছরের চেয়ে তিন গুণের বেশি।
জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজির আহমেদ বলেন, কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এর মানে আমাদের মশা নিধন প্রক্রিয়ায় ঘাটতি রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে হাতুড়ে পদ্ধতিতে। এমন লোক দেখানো কার্যক্রম বন্ধ করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মশা নিধন কার্যক্রম চালু করা জরুরি। দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন এবং কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিয়ে উন্নত পরিকল্পনা করে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, কিছুদিন আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি বৈঠক হয়েছে। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। একটি কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারিজুড়ে পরিষ্কার-পরিছন্নতার দিকে বেশি নজর দিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে ডেঙ্গু মশা নিধনে মাঠে মানবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, জানুয়ারিতে উত্তর সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। মশা নিধন কর্মীদের মাঠে গিয়ে প্রতি ওয়ার্ডে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মাঠে তাদের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে ‘হাজিরা অ্যাপস’ তৈরি করা হয়েছে। ড্রোন ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হচ্ছে মশার হটস্পট। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ডিএনসিসিতে পাঁচজন কীটতত্ত্ববিদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।