- বাংলাদেশ
- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মই রেমিট্যান্স বাড়ানোর ভালো মাধ্যম, ইআরএফের সেমিনারে বক্তারা
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মই রেমিট্যান্স বাড়ানোর ভালো মাধ্যম, ইআরএফের সেমিনারে বক্তারা

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটানোর সহজ উপায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ানো। এ জন্য রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করার পাশাপাশি সুবিধাভোগীর কাছে নিরাপদে তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর রেমিট্যান্স বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম।
গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে এমন অভিমত তুলে ধরেন বক্তারা। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে 'বৈধ পথে রেমিট্যান্স :ডিজিটাল মাধ্যমের সম্ভাবনা' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শুরু থেকেই তিনি রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। তিনি এখনও মনে করেন, অনেকে আড়াই শতাংশ প্রণোদনার জন্য এখানকার অর্থ বাইরে নিয়ে আবার দেশে পাঠাচ্ছে। কে কত টাকা বেতনে দেশের বাইরে যাচ্ছে, তাদের নাম-ঠিকানাসহ সরকারের কাছে আছে। অথচ যাওয়ার পরেই অনেকে ৫ হাজার ডলার পাঠিয়ে দিচ্ছে।
এম এ মান্নান বলেন, একজন শ্রমিক কোনো সমস্যা নিয়ে দূতাবাসে গিয়ে কারও সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। এর সমস্যা সমাধান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এই আমলাতন্ত্র ভাঙতে চান। পরিকল্পনামন্ত্রী উল্লেখ করেন, রেমিট্যান্স গ্রহণকারীদের অনেকের মধ্যে ব্যাংকে গিয়ে লেনদেন বিষয়ে এক ধরনের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব আছে। কাচের ঘরের টাই পরা লোকদের থেকে তাঁরা দূরে থাকতে চান।
পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলার সংকটের সাময়িক সমাধান হতে পারে আমদানি নিয়ন্ত্রণ। স্থায়ী সমাধানের জন্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী যেই হোক- তাঁদের কালো টাকা সৃষ্টির সুযোগ সীমিত করতে হবে। এ ছাড়া রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের মধ্যে ডলারের দরের পার্থক্য কমাতে হবে। তিনি বলেন, এজেন্টরা যেখানেই দর বেশি পায়, সেখানে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে দেয়। ফলে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে গবেষণা সংস্থা সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল এইচ খন্দকার বলেন, বাংলাদেশ রেমিট্যান্স পাঠানোর গড় খরচ ৪ শতাংশের বেশি, যা কমিয়ে আনতে হবে। হুন্ডির মাধ্যমে দ্রুত ও অনেক কম খরচে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণেই অনেকে ওই পথ বেছে নিচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে বের হতে এমএফএসসহ ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে খরচ ও সময় অর্ধেক কমানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউর সাবেক উপপ্রধান মো. ইস্কান্দার মিয়া বলেন, রপ্তানি হচ্ছে এক দেশে, অথচ বেশি প্রবাসী থাকেন এমন দেশ থেকে রপ্তানির আয় দেশে আসছে। নগদ প্রণোদনার সুবিধা নিতে এমন করছে অনেকে। এ ছাড়া রেমিট্যান্সের অর্থ কিনে চোরাচালানের স্বর্ণ, মাদক ও অস্ত্রের টাকা পরিশোধ হয়। এটি বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, প্রবাসী শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি দেশে সীমাবদ্ধ না থেকে বৈচিত্র্য আনতে হবে। দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ওপর জোর দিতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মি বলেন, আইএমএফ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ঋণের জন্য এত কিছু হচ্ছে। অথচ রেমিট্যান্স কমার পরও প্রবাসীরা দুই-আড়াই মাসে এ পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন। তাঁদের সুযোগ-সুবিধার ওপর জোর দিতে হবে।
বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অব.) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বিকাশ বা কোনো এমএফএস সরাসরি দেশের বাইরে থেকে অর্থ আনে না বা পাঠায় না। হুন্ডি কারবারিদের অনেকে এমএফএস মাধ্যমের অপব্যবহার করছে।
উন্নয়ন সমন্বয়ের ইমেরিটাস ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, পাচারকারীরা প্রবাসীদের অর্থ কিনে বাইরে রেখে দিচ্ছে। এটা বন্ধ করা না গেলে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাবে না। ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন