- বাংলাদেশ
- 'খেতা-কম্বল কুন্তাউ নাই শীত কেমনে কাটাই'
সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্বেগ
'খেতা-কম্বল কুন্তাউ নাই শীত কেমনে কাটাই'

ছবি: ফাইল
'খেতা-কম্বল বন্যায় ভাসাইয়া নিছে। বাচ্চা-কাচ্ছা, শাশুড়ি- কাউরোর শীতর কাপড় নাই। স্বামী দিনমজুর। অখন আমরা খাইমু, না ঘর বানাইমু, না শীতের কাপড় কিনমু?'
উদ্বেগ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওর পারের ইসলামপুর গ্রামের মমতাজ বেগম। শীত আসছে। এ শীতকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন, এ নিয়ে তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ। গত বুধবার একইভাবে ওই এলাকার শিরিনা বেগম ও আলেয়া বেগম তাঁদের দুশ্চিন্তার কথা জানান।
শিরিনা বেগম জানান, বন্যার পর তাঁদের বালিশ ছিল না। খাটের ওপর কাপড় বিছিয়ে ঘুমাতেন। এ সময় তাঁর ভাসুর বেড়াতে আসেন। তিনি দুটি বালিশ কিনে দেন। ওই দুই বালিশে এখন তাঁরা চারজন ঘুমান। তিনি বলেন, 'শীতর বাতাস আইতেই চিন্তা অইতাছে, ইবারর শীত কেমনে কাটাইতাম!'
গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আলেয়া বেগম জানান, অনেক কষ্টে লেপ-কম্বল সংগ্রহ করেছিলেন। বন্যা সব নিয়ে গেছে। টাকার অভাবে কাপড়চোপড় কিনতে পারছেন না। শীত আসছে। কীভাবে এ শীত তাঁরা পার করবেন! তিনি জানান, ছয়জনের সংসারে এক চোখ অন্ধ ছেলে একমাত্র উপার্জনকারী। তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা হয় না। বহু বছর কষ্ট করে লেপ-কম্বল করেছিলেন। বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে।
মমতাজ বেগমের ছয় সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী তাঁর স্বামী জয়নাল আবেদীন। গ্রামে কাজ নেই। এক দিন কাজ পেলে তিন দিন বসে থাকতে হয়। সর্বশেষ বন্যায় জয়নালের ঘরও ভেঙে যায়। এখন পরিবার নিয়ে গ্রামেই শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় নষ্ট হওয়া লেপ-তোষক এখনও বাড়ির ভিটায় মাটির সঙ্গে মিশে আছে। এ দম্পতি জানান, সামনের শীত তাঁদের জন্য অনেক কষ্ট নিয়ে আসছে।
গ্রামের নুরুল ইসলাম কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। শিরিনা তাঁর স্ত্রী। তিনি জানান, ঘরে বুকসমান পানি হলে ঢেউয়ের মধ্যেই প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি ভবনে উঠেছিলেন। যাওয়ার সময় বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়া লেপ-তোষক, কম্বল ঘরের টিনের চালের ওপরে রেখে যান। এক মাস পর এসে দেখেন সবকিছুই পচে গেছে। এরপর বালিশ ছাড়াই ঘুমিয়েছেন অনেকদিন। এখন দুই বালিশে চারজনকে শোতে হয়। ঘরে কোনো শীতের কাপড় নেই।
একই অবস্থা গ্রামের খুর্শিদ আলম, শামছুল হক, গোলাম হোসেন, আব্দুল জব্বার, আকবর আলী, শহরবানু, জাহেদা বেগমের। আকুতি করে তাঁরা বলেন, 'দয়া করে আমাদের নামটিও লিখে নিয়ে যান, ভাই। শীতের কাপড় না পেলে এবার রক্ষা নাই।'
জানা যায়, ইসলামপুর গ্রামে সাড়ে তিনশ পরিবারের বাস। এরমধ্যে অন্তত ষাট পরিবারের শীতবস্ত্র বলতে কিছুই নেই। শীত কীভাবে কাটাবেন, এ নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম জানান, সরকারি হিসাবে গত জুনের বন্যায় জেলার ১২ উপজেলায় পাঁচ হাজার ৩৯৫ পরিবারের ঘরবাড়ি, লেপ-তোষক, বিছানাপত্রসহ সবকিছুই ভেসে গেছে। এরমধ্যে ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বেশি।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এবার শীতের কষ্টে পড়তে পারে- বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গত সপ্তাহে ত্রাণ সচিবের কাছে অতিরিক্ত শীতবস্ত্র চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কম্বল ও সোয়েটার বেশি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে মৌখিকভাবেও সংশ্নিষ্ট সব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।
মন্তব্য করুন