ছিনিয়ে নেওয়ার চার দিন পার হলেও দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেলকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাঁরা কোন এলাকায় রয়েছেন এমন স্পষ্ট তথ্যও গোয়েন্দাদের হাতে নেই। তবে তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, শামীম ও সোহেল দেশ থেকে পালাতে পারেননি। দেশের অভ্যন্তরে কোনো এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে নানামুখী আভিযান ও তদন্ত চলছে।

এদিকে, শামীম ও সোহেলের এক সহযোগীকে গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার করেছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা। তাঁর নাম মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪)। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটে। সিলেটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তিনি। আদালত চত্বর থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিও মেহেদী। তবে ছিনতাইকাণ্ডে সরাসরি তিনি উপস্থিত ছিলেন কিনা এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মেহেদী আনসার আল ইসলামের দাওয়া বিভাগের একজন মাশুল।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় যে মামলা হয়েছে ওই মামলায় ১৪ নম্বর আসামি এই মেহেদী।
গত রোববার ঢাকার আদালত এলাকা থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের আবারও আদালতে হাজির করায় কারাগারের পাঁচ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে রংপুর বিভাগে বদলি করা হয়েছে। রংপুরের ডিআইজি প্রিজন মো. আলতাব হোসেনকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। আর চট্টগ্রাম বিভাগের এ কে এম ফজলুল হককে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল আজিজকে বদলি করা হয়েছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালাকে পাঠানো হয়েছে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে রদবদল সংক্রান্ত এই আদেশ জারি করা হয়। এর আগে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের ৫ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। এ ঘটনায় পুলিশ সদরদপ্তর ও ডিএমপি পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দেশ অমান্য করে জঙ্গি ছিনতাইকাণ্ডের পর দিন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু'জনসহ জেএমবির সাত জঙ্গিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়। সম্প্রতি এক নির্দেশনায় বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে আনতে হবে না। তবে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর দিন সেই নির্দেশ পালন করেননি সংশ্নিষ্ট কারাগারের কর্মকর্তারা। এ কারণে কারা কর্মকর্তাদের রদবদল করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার দিন কেন তাদের ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়নি সেই তদন্ত চলছে। এই ধরনের কারাগারের যেসব কর্মকর্তা গাফিলতি করেছেন তাঁদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, যে দুই জঙ্গিকে ছিনতাই করা হয়েছে তাদের ছবি দেশের সব থানায় পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক করা হয়। এ ছাড়া সম্ভাব্য যে এলাকায় জঙ্গিরা আত্মগোপনে থাকতে পারে সেখানে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এমনকি সব কারাগারেও বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, মূলত চারজনকে টার্গেট করেই জঙ্গিরা ছিনতাই অপারেশন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। ৪-৬ মাস আগে থেকে ছক কষা হয়েছিল। তিন মাস আগে মোটরসাইকেল কেনা শুরু করেন। অপারেশনের কার কী দায়িত্ব এটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল। আরাফাত রহমান কারাবন্দি ও জেলের বাইরে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে যোগাযোগের মূল যোগসূত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। তবে আদালত চত্বর থেকে আরাফাত ও তার আরেক সহযোগীকে ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় তাদের সহযোগীরা। আর ছিনতাই অপারেশনের সামরিক কমান্ডার ছিলেন মশিউর রহমান আয়মান।