- বাংলাদেশ
- পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া প্রতারণার সামিল
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া প্রতারণার সামিল

গত ২৫ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পাহাড়ি আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারনার সামিল। বিগত দিনে পাহাড়ের অস্থিরতা দূর করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি হয়েছিল। দীর্ঘ সময়েও সেই অস্থিরতা দূর হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাঙ্গা, সন্ত্রাস, অবৈধভাবে ভূমি দখল, নির্যাতন চলছেই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য ও নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা বক্তব্য প্রদান করেন।
খুশী কবির বলেন, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও গত ২৫ বছর পরও তা পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন না হওয়া পাহাড়ের আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। যারা চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেন তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ যেখানে ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল নাগরিক সমঅধিকার, সমান মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে সেটা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
রিইব নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, সরকারি ভাষ্যমতে, চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয়েছে, অপর ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকারী অপর পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মতে, ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টির বাস্তবায়ন করা হয়েছে, ১৮টি ধারা আংশিক ও বাকি ২৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি।
তিনি আরও বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধিমালা আজ পর্যন্ত প্রণয়ন না হওয়া। বিধিমালা না করে কমিশনকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে কমিশনের কাছে ২২ হাজারের অধিক ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত আবেদন জমা আছে। সেগুলো অদ্যাবদি নিষ্পত্তি করা হয়নি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া। পার্বত্য চট্টগ্রামে গেলেই বুঝা যায় যে, শান্তি চুক্তি সঠিক পথে হাঁটেনি। সম্মিলিত নাগরিক জোট গঠনের মাধ্যমে আদিবাসী-বাঙালি ও প্রশাসনের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরুর আহবান জানান।
সাবেক তথ্য কমিশনার ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে সেটেলারদের বাধার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের পর পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সভা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সেটেলারদের কারা ইন্ধন দিচ্ছে বলে তিনি প্রশ্ন তুলে ধরেন।
চাকমা সার্কেল চিফের উপদেষ্টা রাণী য়েন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। সারা দেশেই নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়ছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতার ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে, ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, ধর্ষণের পর হত্যা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পাচারের জন্য বিয়ে ও অপহরণসহ অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপ।
মন্তব্য করুন