বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন রাজশাহীর চারঘাটার বীরাঙ্গনা সফুরা। নানা রোগে আক্রান্ত। অভাবের কারণে চিকিৎসা নিতে পারেন না। এক বেলা খান, তো আরেক বেলা না খেয়ে থাকেন। এর মধ্যে সবার অবজ্ঞা-অবহেলা, উপহাস তো আছেই। আত্মত্যাগে অর্জিত 'বীরাঙ্গনা' শব্দটি কখনও কখনও তাঁর জন্য হয়ে উঠেছে অপমানের! শুধু সফুরাই নন, একই অবস্থা আসমা-খাদিজা-শাহরুনসহ অনেক বীরাঙ্গনার। মৃত্যুর আগে তাঁরা চান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, চান মুক্তিযোদ্ধার সম্মান।

মুক্তিযুদ্ধকালে যৌন সহিংসতার শিকার বীরাঙ্গনাদের প্রথম সংহতি সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার। সম্মেলন শেষে 'নারীপক্ষ' সংগঠনের ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের দাবি ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন নারী আন্দোলন কর্মী ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদস্য সাফিয়া আজিম ও আইনজীবী কামরুন নাহার।

শিরিন হক বলেন, ২০১১ সাল থেকে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁরা মনে করেন, নির্যাতনের শিকার নারীর অধিকার আদায়ের প্রশ্ন এলে সবার আগে বীরাঙ্গনাদের অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দিলেও সবাই এখনও তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। তাঁদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত হয়নি ৫০ বছরেও। বয়সের ভারে তাঁদের অনেকেই এখন আর কাজ করতে পারেন না।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের ৮৫ জন বীরাঙ্গনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নারীপক্ষ। তাঁদের কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও অনেকেই দীর্ঘদিন আবেদন করে কোনো সুরাহা করতে পারছেন না। সরকারি ভাতা কিংবা নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে এত দিন বীরাঙ্গনার কেউ কেউ নিজেদের খাদ্য ও চিকিৎসার খরচ চালিয়ে নিলেও এখন আর পারছেন না।

এ প্রেক্ষাপটে গত জানুয়ারি থেকে নারীপক্ষ ৪৬ জন বীরাঙ্গনাকে পাঁচ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়। বিজয় দিবসকে সামনে রেখে শিরিন হক সব নারী মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন। পাশাপাশি তাঁদের অবদানকে সম্মানজনকভাবে উপস্থাপনের আহ্বান জানান।