মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার চরতিল্লি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বার্ষিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র আটকে জরিমানার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তাঁরা বলছেন, জরিমানা শোধ না করলে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলছেন, শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।

আগামী ২৭ নভেম্বর রোববার থেকে সাটুরিয়া উপজেলার সব মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে শুরু হবে বার্ষিক পরীক্ষা। এতে চরতিল্লি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকেই নানা কারণে বছরজুড়ে অনুপস্থিত থাকতে হয়। নদীভাঙন কবলিত ইউনিয়নটির মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী। যে কারণে এখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। শ্রম বিক্রি না করলে অনেক পরিবারে প্রতিদিন ভাতও জোটে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে মা-বাবার সঙ্গে কাজ করতে হয়।

নবম শ্রেণির ছাত্র হাফিজুর ইসলামের চলতি বছর জরিমানা হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা। একই শ্রেণির ছাত্র রিফাত হোসেনের ৩ হাজার ৫০০, সপ্তম শ্রেণির ইউনুছ আলীর ৯৫০ টাকা জরিমানা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শান্তি ইসলামকে ৮০০ টাকা জরিমানা পরিশোধ করে পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল আহমেদ ৪০০ টাকা জরিমানা দিয়ে প্রবেশপত্র পেয়েছে। এমন দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে বড় অঙ্কের জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

কয়েক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানিয়েছেন, বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তাঁরা সন্তানদের নিয়ে বেতন পরিশোধ করতে এলে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। অনেকের জরিমানার টাকা বেতনের চেয়েও দ্বিগুণ। এ জন্য প্রধান শিক্ষকের ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন তাঁরা। যে কারণে হতদরিদ্র বহু শিক্ষার্থী এবার বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না বলে মনে করছে স্থানীয় সচেতন মহল।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ের ৬৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫০ থেকে ২০০ জন অনুপস্থিত থাকে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে জরিমানা আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটির বোর্ডসভায়। এর উদ্দেশ্য হলো, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বাড়ানো।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. শরিফুল ইসলামের বক্তব্যে কিছুটা গরমিল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, একদিন অনুপস্থিত থাকলে ৫০ টাকা জরিমানা নেওয়া হবে- এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশল নেওয়া হয়েছে।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আরা বলেন, চরতিল্লি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জরিমানার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন। প্রবেশপত্র আটকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। যদি ব্যবস্থাপনা কমিটি জরিমানা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তবে তা নোটিশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আগে জানাতে হবে।