- বাংলাদেশ
- পর্বতারোহণের গা ছমছমে গল্প অভিযাত্রীদের
পর্বতারোহণের গা ছমছমে গল্প অভিযাত্রীদের
২১ হাজার ফুট উচ্চতার ডোলমা খাং জয়

ছবি: সংগৃহীত
ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল হিমালয়ের অজেয় পিঠ দোগারি হিমাল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মিটার উচ্চতার এই চূড়ায় পা রাখতে সাহসেরও কমতি ছিল না। কিন্তু আবহাওয়া প্রসন্ন হয়নি। শেষ পর্যন্ত বদলাতে হয় পরিকল্পনা। বরফের সাগর পেরিয়ে আর কাঙ্ক্ষিত ক্যাম্প স্পর্শ করা হয়নি। তবে চরম ঝুঁকি নিয়ে ২০ হাজার ৭৭৪ ফুট উচ্চতার ডোলমা খাং শৃঙ্গে প্রথমবার লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি পর্বতারোহীরা। গতকাল শুক্রবার তাঁদের মুখেই শোনা গেল গা ছমছমে সেই অভিযানের গল্প।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন বাংলাদেশ দলের দলনেতা এম এ মুহিত এবং অন্যরা। বাংলাদেশ ও নেপালের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ অভিযানে গত ২ নভেম্বর ডোলমা খাং চূড়ায় পৌঁছান চার বাংলাদেশি এবং দুই নেপালি অভিযাত্রী। ঢাকা থেকে নেপালের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় যে জাতীয় পতাকা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, ডোলমা খাং শৃঙ্গে সেটিই উড়িয়েছেন তাঁরা।
এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী মুহিত বলেন, দোগারি হিমাল হিমালয়ের একদম পশ্চিমের অঞ্চল। এ বছর সেখানে আবহাওয়া এতটা খারাপ ছিল যে নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ের ২৯ জন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এরপরও তাঁরা চেষ্টা করেন। তাঁরা দোগারি হিমাল বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে ট্রেকিং করেন। সেখানে ১৫ হাজার ৯২ ফুট উচ্চতায় নিমকুণ্ড ফুলগাড়ি উপত্যকায় ক্যাম্প করেন। কিন্তু দু'দিন থেকে নানাভাবে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
তিনি বলেন, 'সাধারণত এ ধরনের জায়গা ঘাসে আবৃত থাকে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত নেপাল-হিমালয়ে ভারি তুষারপাতের কারণে তিন থেকে চার ফুট উঁচু বরফ জমে ছিল। আমরা দেখছিলাম যে যত ওপরের দিকে যাচ্ছি, একটা পা ফেললে হাঁটুর ওপর বরফ উঠে যায়। যখন হাঁটুর ওপর বরফ উঠে যায় তখন এক পা তুলে আরেক পা ফেলাটা কষ্টকর। তখন নেপালের কিলু পেম্বা শেরপার সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করি। সবদিক বিবেচনা করে আমরা পাঁচ হাজার মিটারের কাছাকাছি পৌঁছেও সাত থেকে আট ফুট উঁচু বরফের কারণে দোগারি হিমাল অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৪ অক্টোবর কাঠমান্ডু ফিরে আসি।'
কাঠমান্ডু ফিরে অভিযান আয়োজনকারী সংস্থা ইমাজিন নেপালের কর্ণধার পর্বতারোহী মিংমা গ্যালজে শেরপার সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ অভিযানটি ডোলমা খাং শিখরে করার সিদ্ধান্ত হয়। অভিযানে বাংলাদেশ দলে এম এ মুহিতের সঙ্গী ছিলেন বাহলুল মজনু, ইকরামুল হাসান ও রিয়াসাদ সানভী। নেপালের কিলু পেম্বা শেরপা এবং নিমা নুরু শেরপার সঙ্গে তাঁরা ২৮ অক্টোবর সিমিগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডু ত্যাগ করেন। সিমিগাঁও থেকে ট্রেকিং করে ৩০ অক্টোবর ১২ হাজার ২৭০ ফুট উচ্চতার বেদিং গ্রামে পৌঁছায় অভিযাত্রী দলটি। বেদিংই ছিল এ অভিযানের বেস ক্যাম্প।
মুহিত বলেন, দুই রাত বেদিংয়ে থেকে ১ নভেম্বর দুপুরে ১৬ হাজার ৭৬ ফুট উচ্চতায় হাইক্যাম্পে পৌঁছান তাঁরা। পরে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২ নভেম্বর নেপাল সময় সকালে ডোলমা খাং শীর্ষে পৌঁছান।
অ্যান্টার্কটিকা ও সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী, ফজলে রাব্বি, ফজল মাহমুদ রনি, ডা. নিয়াজ আবদুর রহমান প্রমুখ।
বিষয় : পর্বতারোহণ হিমালয় জয় ডোলমা খাং জয়
মন্তব্য করুন