পুরান ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সেই হেলমেটধারীকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনার দিন হেলমেট পরিহিত অবস্থায় মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই জঙ্গি তার দুই সহযোগীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, তাঁরা জঙ্গিদের কেনা তিনটি মোটরসাইকেলের বিষয়ে তথ্য পেলেও জড়িতদের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ক্লু পাননি। ছিনতাইয়ে জড়িত কয়েকজনের ব্যাপারে কিছু তথ্যউপাত্ত তদন্তকারীদের হাতে এলেও তাদের অবস্থান সম্পর্কে গোয়েন্দারা অন্ধকারে।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, হেলমেটধারীর নাম-পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। ছিনতাই অপারেশনের আদ্যোপান্ত জানতে একাধিক টিম কাজ করছে।
এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় ঈদী আমিন নামের এক আসামি গতকাল রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। পুলিশের আবেদনের পর তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকার এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন গতকাল এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর ২টার দিকে ঈদী আমিন তার আইনজীবীর মাধ্যমে ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এরপর আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। ওই আসামি আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। তবে আদালত জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আত্মসমর্পণের বিষয়টি জানাজানি হলে সিটিটিসির কর্মকর্তা তাকে জঙ্গি ছিনতাই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ঈদী আমিনের জামিন আবেদনকারী আইনজীবী মো. রবিউল হোসেন বলেন, ঈদী আমিন স্বেছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। এখন পুলিশ তদন্ত করবে, এই আসামি দোষী নাকি নির্দোষ।

ঈদী আমিনের রিমান্ড আবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, ২০ নভেম্বর আনসার আল ইসলামের ১০-১২ জন সদস্য আদালতের মূল ফটকে অবস্থান করে। এরপর তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়। গ্রেপ্তার করা আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়ার পরামর্শে আনসার আল ইসলামের আসকারি শাখায় সদস্য রিক্রুট করে অমি। সংগঠনের শীর্ষ নেতা ও বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত অমি। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতারা জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার কথা জানায়। পুলিশ দাবি করে, ঘটনার দিন ঈদী আমিন সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছিল।

এদিকে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনতাইয়ের সময় বাধা দিতে গিয়ে নূরে আজাদ নামে যে কনস্টেবল আহত হয়েছিলেন তাঁকে গতকাল সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে এই ঘটনায় আরও ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁরা হলেন- ঢাকা কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ এসআই নাহিদুর রহমান, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফুল হাসান ও আব্দুস সাত্তার।

২০ নভেম্বর দুপুরে পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ওপর হামলা ও কেমিক্যাল স্প্রে করে মাইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা। একই সময়ে আবদুস সবুর ও আরাফাত রহমান নামে আরও দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনার পর মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফিকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। সে বর্তমানে রিমান্ডে। তবে এখনও ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।