- বাংলাদেশ
- ঋণ কেলেঙ্কারির রিপোর্ট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
সচিব সভা
ঋণ কেলেঙ্কারির রিপোর্ট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মন্দা যাতে কাবু করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এটি তাঁর কথা নয়। বিশ্বের এক-দুটি দেশ চলমান সংকটের সুবিধা পাচ্ছে, বেশিরভাগ দেশ কষ্টে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃচ্ছ্র সাধনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেছেন, 'আমরা এখনই বিপদে পড়ে যাইনি। কিন্তু আগাম ব্যবস্থাটা নিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে বড় বিপদ না হয়।'
গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এসব নির্দেশনা দিয়েছেন সরকারপ্রধান। দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সভা শেষ হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান।
সভায় ব্যাংকিং সেক্টরের সাম্প্রতিক ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়টি এসেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, সচিবদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ আমাদের দেশকে কখনোই যেন ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য এখন থেকেই আমাদের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খাদ্যের মজুত যাতে কোনোভাবেই ১৫ লাখ টনের নিচে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এখন ১৬ লাখ টনের বেশি খাদ্য মজুত আছে, এটি সন্তোষজনক।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধন, যাচাই-বাছাই করে অতি প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও প্রতি ইঞ্চি পতিত জমি চাষের অধীনে নিয়ে আসার জন্য জনগণকে সচেতন করা এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ম্ফীতি বহু গুণ বেড়েছে। আমাদের দেশও এর বাইরে নয় এবং এটি আমাদের দেশেও আঘাত করেছে। আমাদের যারা রেমিট্যান্স পাঠায়, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ ও প্রণোদনা আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের ভালো রিজার্ভ রয়েছে। আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের পাঁচ-ছয় মাসের রিজার্ভ আছে। তারপরও আরেকটু সচেতন হতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের অনেক জিনিস এখনও কিনতে হয়। এসব পণ্য যাতে আমরা দেশে উৎপাদন করতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বিদ্যুৎ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য জ্বালানি তেলের দাম বা গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব দ্রুততার সঙ্গে যেন কার্যকর হয়। মাদক আর জঙ্গিবাদ নিয়েও সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমাদের যুবসমাজ যেন মাদক থেকে দূরে থাকে, সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি প্রয়োজন। জঙ্গিবাদে যারা জড়াচ্ছে, তারা যেন কারও প্রশ্রয় এবং আর্থিক সহযোগিতা না পায়, তা নিশ্চিত করতেও বলেছেন সরকারপ্রধান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সুশাসনের জন্য জনগণের ও রাষ্ট্রের চাহিদার সমন্বয় করে কাজ করার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্মার্ট গভর্ন্যান্সের দিকে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। সিটিজেন চার্টার, শুদ্ধাচার প্রতিপালন ও তথ্য অধিকার আইন যেন ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেসব বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
নতুন দুই বিভাগের প্রস্তাব স্থগিত :সচিব সভার আগে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক 'পদ্মা' ও 'মেঘনা' নামে দুই নতুন প্রশাসনিক বিভাগের প্রস্তাব উঠলে তা পাস হয়নি। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ার বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে দুই নদীর নামে বিভাগ করার সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকছে। তবে বৈঠকে একাধিক থানা, উপজেলা ও পৌরসভা-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
মন্তব্য করুন