মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর এবার শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে তোড়জোড়। কলেজগুলোতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে ৮ ডিসেম্বর। আগামীকাল বৃহস্পতিবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ-সংক্রান্ত বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, এবারও কলেজগুলোতে কোনো ভর্তি পরীক্ষা থাকছে না। মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে অনলাইনে আবেদন করে পছন্দের কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। ভর্তি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে আসন সংকট নেই। সবাই ভর্তি হতে পারবে, বরং বহু আসন খালি থাকবে।

আসন সংকট একাদশ শ্রেণিতে কখনও হয় না। তবে নামিদামি কলেজগুলোতে ভর্তির লড়াই চলে। সবাই মানসম্মত কলেজে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু ভালো মানের কলেজ কম, আসনও কম। এগুলোতে মূলত জিপিএ ৫ পাওয়াদেরই লড়াই হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এটিএম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আসন সংকট না থাকলেও ভালো কলেজে আসন সংখ্যা সীমিত। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২। গত বছরের তুলনায় জিপিএ ৫ বেড়েছে ৮৬ হাজার ২৬২টি। তাই ১ লাখ ৭৬ হাজার মেধাবীকে মানসম্মত কলেজে স্থান করে দেওয়াই চ্যালেঞ্জ। দেশে কলেজ বাড়লেও মানসম্মত শিক্ষা সবগুলোতে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। জিপিএ ৫ পেয়েও অনেককে ভর্তি হতে হবে মানহীন কলেজে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে একাদশ শ্রেণিতে আসন ২৫ লাখ। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ৫ লাখ আসন। এবার মাধ্যমিকে ১১টি বোর্ড মিলে পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। সে হিসাবে অন্তত সাড়ে ৭ লাখ আসন খালি থাকবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক সমকালকে বলেছেন, গতবার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১ লাখ আসন খালি ছিল। ছাত্র সংকটের কারণে অনেক কলেজ বন্ধ করার মতো পরিস্থিতিতে রয়েছে। তবে মানসম্মত কলেজগুলোতে আসনের সীমাবদ্ধতা আছে। জানা গেছে, এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে যাচ্ছে সরকার। ভর্তির খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে ১৩০ টাকা নিশ্চয়ন ফি দিতে হবে। ভর্তির জন্য এবারও অনলাইনে ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসা পছন্দ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এজন্য তাদের ১৫০ টাকা আবেদন ফি দিতে হবে। অর্থাৎ ভর্তি প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থীর খরচ হবে ২৮০ টাকা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ঢাকার মধ্যে আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের বাংলা মাধ্যমে ভর্তির জন্য ৯ হাজার ও ইংরেজি মাধ্যমের ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে। সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নয়ন ফি ৩ হাজার টাকার বেশি করা যাবে না। মফস্বল ও পৌর এলাকার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে ১ হাজার টাকা, পৌর জেলা সদরে ২ হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।

কোটা পদ্ধতি বাতিল করা প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়েছে, শতভাগ মেধা কোটা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোটা হিসেবে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, বিকেএসপি শূন্য দশমিক ৫ এবং প্রবাসী শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কোটা বহাল রাখা হবে। এ ছাড়া বিভাগীয়, জেলা সদর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দপ্তরগুলোর কোটা বাতিল করা হয়েছে। অনলাইনে একাদশ শ্রেণির প্রথম ধাপের ভর্তি আবেদন ৮ ডিসেম্বর শুরু হবে।

ব্যানবেইসের তথ্য অনুসারে, শুধু জিপিএ ৫ পাওয়া মেধাবীদের আসন করে দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে নেই। রাজধানীতে ভালো মানের ২০-২৫টি কলেজে আসন আছে মাত্র ২০ হাজার। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য শহর পর্যায়ের কলেজে বাধ্যতামূলকভাবে ১০ ভাগ আসন সংরক্ষণ করার জন্য কলেজগুলোতে দেওয়া নির্দেশ এবারও বহাল রাখা হবে। এবার আরও বাড়ানো যায় কিনা তা জোরালোভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এবারও জিপিএর ভিত্তিতেই কলেজে ভর্তির নির্দেশনা তৈরি হচ্ছে। একই সিরিয়ালে একই জিপিএপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী থাকলে সে ক্ষেত্রে ভর্তি কমিটি চতুর্থ বিষয় ছাড়া জিপিএ এবং ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়কে প্রাধান্য দিতে পারবে।


বিষয় : ভালো কলেজে ভর্তির লড়াই

মন্তব্য করুন