- বাংলাদেশ
- দেশপ্রেমের দীপশিখা
দেশপ্রেমের দীপশিখা

১৯৪৭-এর দেশভাগের পূর্ববর্তী সময় ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিক, ধর্মীয় এবং পুরুষশাসিত সমাজে নারীর জীবনযাত্রার অবস্থা কেমন ছিল তার এক জীবন্ত দলিল হচ্ছে হাসান আজিজুল হকের 'আগুনপাখি'। মায়ের মুখনিঃসৃত ভাষায় মূলত রাঢ়বঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা হয় কাব্যিক উপন্যাস এটি। রাঢ়ের গ্রাম্য মুসলমান গৃহস্থ পরিবারের উত্থান-পতন, দেশভাগের নির্মমতা, একান্নবর্তী পরিবারের ভাঙন বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। উপন্যাসটি শুরুটা কঠিন মনে হলেও কিছু পথ এগিয়ে গেলে পড়ার আনন্দ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। প্রচলিত প্রেম কাহিনিনির্ভর নয় এই উপন্যাস।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও রুশবিপ্লব পরবর্তী সময়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, ভারতের বিভক্তি চিন্তা ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও ভয়ংকর ধর্মীয় দাঙ্গার রোষানল থেকে প্রত্যক্ষভাবে বহুদূরে গ্রামীণ জনপদের অতিব সাধারণ নিম্নবিত্ত এক মুসলিম পরিবারের এক অশিক্ষিত নারীর অমার্জিত ভাষায় তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে শেষ বয়সে একাকিত্বের বেদনা এবং দেশপ্রেমের জীবন্ত আখ্যান চিত্রায়িত হয়েছে এই উপন্যাসে।
'আগুনপাখি' দেশভাগের এই নির্মম অর্থহীনতা, সীমাহীন মানবিকতার দৃষ্টান্ত, দেশভাগের কারণে দেশকালের বন্ধনগুলো ভেঙে যাওয়া, একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস সত্ত্বেও একজন নারীর নিঃসঙ্গ জীবনের বিষাদময় জীবনযাপন ও গুরুত্বহীনতার জীবন্ত প্রতিবাদও বটে। এত শূন্যতা, বিচ্ছেদ, নির্মমতা ও ধ্বংসলীলার পরও এই উপন্যাসে পুনর্জাগরণের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়েছে একজন নারীর কণ্ঠে, যা তৎকালীন মহাবিশ্বের সমাজব্যবস্থা ও সকল নারীর বাস্তবতা। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে দেশভাগের কারণে হিন্দু-মুসলিম আলাদা দুটি রাষ্ট্র হলেও মনুষ্যত্ববোধ ও আত্মার বন্ধন একাকার হয়ে আছে।
নারীর কণ্ঠের প্রতিধ্বনি হচ্ছে এই বলে, 'আমাকে কেউ বোঝাইতে পারল না যি সেই দ্যাশটা আমি মোসলমান বলেই আমার দেশ আর দ্যাশটি আমার লয়। আমাকে আরো বোঝাইতে পারলো না যি ছেলেমেয়ে আর যায়গায় গেয়েছে বলে আমাকেও সিখানে যেতে হবে। এই উপন্যাস শুধু অতীত-ঐতিহ্যসংবলিত নয়, এটি বর্তমানের বাস্তবতার সঙ্গে এক অবিস্মরণীয় সেতুবন্ধ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটি
মন্তব্য করুন