করোনা প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে এমন ৬২ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনও করোনার বুস্টার টিকা পায়নি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকার বাইরে রেখেই গতকাল মঙ্গলবার চতুর্থ ডোজের কার্যক্রম শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে যথাযথ প্রচার-প্রচারণার অভাব ও সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক থাকায় সাড়া মেলেনি এ কর্মকাণ্ডে। টিকা গ্রহীতাদের অভিযোগ, টিকা পেতে কাউকেই এসএমএস দেওয়া হয়নি। এখনও প্রস্তুত নয় সুরক্ষা অ্যাপ। মানুষকে জানাতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি।

গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চতুর্থ ডোজ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। এখন থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজের মতো সব কেন্দ্রে এ টিকা পাওয়া যাবে। চতুর্থ ডোজে দেওয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকা। প্রথম দফায় দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তসহ পাঁচ বৈশিষ্ট্যের ৮০ লাখের বেশি মানুষকে এই টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে টিকাগ্রহীতার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র ছিল ফাঁকা। অধিকাংশ কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকজন চতুর্থ ডোজ নিতে এসেছেন। তাঁদের অধিকাংশ চিকিৎসক ও প্রবাসী। এ কেন্দ্রে দুপুর ১টা পর্যন্ত চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন ১৮ জন।

আজিমপুরের বাসিন্দা ডা. কাউসার আহমেদ এ কেন্দ্রে চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন। তিনি বলেন, অন্য কাজে ঢাকা মেডিকেলে এসে দেখি, চতুর্থ ডোজ টিকা দিচ্ছে। নিজে টিকা নিয়ে ফোন করে স্ত্রী ও মাকে কেন্দ্রে এনে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনার টিকার চতুর্থ ডোজ শুরু হলেও সুরক্ষা অ্যাপ এখনও প্রস্তুত হয়নি। অনলাইনে টিকার কোনো তথ্য মিলছে না। সনদ পেতে জটিলতা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে তাঁর।

একই চিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। টিকাদানে দায়িত্বরত তিনজন নার্স বলেন, প্রচার মাসের শুরু থেকে চললেও আজ যে শুরু হয়েছে, সেটি হয়তো অনেকের জানা নেই। আর কাউকে এসএমএসও দেওয়া হয়নি। তাই কিছুটা কম। ধীরে ধীরে লোক বাড়বে আশা করছি।

আগের তিন ডোজ কার্যক্রমের শুরুতে উপচে পড়া ভিড় থাকত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে। কিন্তু চতুর্থ ডোজের বেলায় উল্টো চিত্র দেখা গেছে সেখানে। কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় একেবারে ফাঁকা। টিকাগ্রহীতার অপেক্ষায় বসে আছেন দুই নার্স। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টায় মাত্র দু'জন চতুর্থ ডোজের টিকা নিয়েছেন।

প্রচারণার অভাবের কথা স্বীকার করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে গতি বাড়বে। এখনই আমরা সবাইকে এই টিকা দিচ্ছি না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবির বলেন, অ্যান্টিবডি বেশিদিন থাকে না। তাই চতুর্থ ডোজ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ মুহূর্তে এই ডোজ টিকা নেওয়ার মতো টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ৪ কোটির মতো। তবে আপাতত আমরা পাঁচ শ্রেণিতে ৮০ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় বুস্টার (চতুর্থ ডোজ) দেব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৫ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ, সাড়ে ১২ কোটি দ্বিতীয় ডোজ এবং সাড়ে ৬ কোটি মানুষকে প্রথম বুস্টার বা তৃতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। এখনও ১ কোটি ৩৩ লাখ টিকা মজুত রয়েছে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশে ১০০ জনের মধ্যে ৩৮ জন্য করোনা প্রতিরোধে বুস্টার ডোজ টিকা পেয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছে ৭৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও প্রথম ডোজ পেয়েছে ৮৭ শতাংশ মানুষ।

করোনা পরিস্থিতি :দেশে গত এক দিনে আরও ১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ সময় কারও মৃত্যু হয়নি। শনাক্তের হার কমে হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬৭ জন। মৃতের মোট সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৩৮ জন।