অভিন্ন মিত্রদের সহায়তাই সংকট সমাধানের পথ
মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা
ফাইল ছবি
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:২৫ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০১:১০
চীন-ভারতের মতো অভিন্ন মিত্রের সহায়তাই এখন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সমাধানের শান্তিপূর্ণ পথ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। শুধু চীন বা ভারত নয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের অভিন্ন বাকি মিত্রদের এ সংকট সমাধানে কাজে লাগানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
সংঘাতের মুখে গতকাল রোববার নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। তারা মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যেই পালিয়ে আসে।
মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশে এভাবে প্রবেশ করা সেখানকার সংকটময় পরিস্থিতির একটি ইঙ্গিত বলে জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। সমকালকে তিনি বলেন, প্রথমত, আহত বাংলাদেশিদের সহায়তা করতে হবে। তাদের সুচিকিৎসা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এখানে আসবে। দ্বিতীয়ত, সীমান্তে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। কারণ এতদিন সেখানকার সংঘাতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই প্রভাবিত হয়নি। তবে এখন যেহেতু তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকেছে, ফলে প্রচেষ্টা থাকতে হবে– এ সংঘাত যাতে কোনোভাবেই সীমান্তের এপারে চলে না আসে। সেই সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব সদস্যকে ফেরতের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে কী হচ্ছে তার একটি সম্মুখ ধারণা বাংলাদেশের থাকা উচিত। সেখানকার পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চীন, ভারত, আশিয়ান বা থাইল্যান্ডের মতো দুই দেশের অভিন্ন বন্ধুদের কাজে লাগানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে মিয়ানমার নিয়ে অভিন্ন মিত্রদের মূল্যায়ন কী, তারও ধারণা বাংলাদেশের প্রয়োজন। এ ছাড়া কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা, তাও ভেবে দেখতে পারে ঢাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য ঢুকেছেন, তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। কারণ এখানে দেশটির সামরিক বাহিনীর ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশের এখন বড় আকারের আন্তর্জাতিকীকরণ করা প্রয়োজন। পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকলে এখানে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। সেই সঙ্গে সংকট সমাধানে দিল্লির সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে চীনসহ অন্য যেসব অভিন্ন মিত্র রয়েছে তাদের সহায়তাও বাংলাদেশের প্রয়োজন।
গত অক্টোবরে আরাকান আর্মি সামরিক বাহিনীবিরোধী সশস্ত্র জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ হিসেবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। আরাকান আর্মি ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চাপে থাকা সেনাবাহিনীর ওপর একের পর এক আক্রমণ শুরু করে। গত ১১ সপ্তাহে চীনের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অংশে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আক্রমণে পিছু হটে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সর্বশেষ গত শনিবার মিয়ানমারের ভারতঘেঁষা পালেতোয়া শহরের মিওয়া ঘাঁটির শেষ সেনা চৌকিটি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। ২০২০ সালে এ ঘাঁটিই ৪২ দিনের টানা লড়াইয়ের পর দখল করতে ব্যর্থ হয় বিদ্রোহীরা। ইতোমধ্যে এসব এলাকা থেকে কয়েকশ মিয়ানমারের সৈনিক পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনা এটাই প্রথম।