ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ চায় সরকার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ চায় সরকার

প্রতিকী ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৩৬ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০৭:০৪

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশে বিশ্বজুড়ে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এআইনির্ভর প্রযুক্তিই আগামীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে উন্নত এই প্রযুক্তিকে মানুষের পেশা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন অনেকেই। বিভিন্ন দেশ তাই এআইয়ের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে আইন ও নীতিমালা করছে। বাংলাদেশও এআই নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এটুআই ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। 

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মানুষের অধিকার সংরক্ষণ ও সুবিধার জন্য এআই ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। অন্যান্য দেশে এই আইনের ব্যবহার পরীক্ষা করে দেখতে সময় নিচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এআই আইনের খসড়া তৈরি হবে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এআইকে বাইপাস করে কিছু করা সম্ভব নয়। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমরা কতটুকু উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করব এবং কতটুকু অপপ্রয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করব। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত পরামর্শ ও মতবিনিময় সভা শেষে এসব কথা বলেন দুই মন্ত্রী। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছিলেন বিজ্ঞানীরা। গত বছর চ্যাটজিপিটির আত্মপ্রকাশ এই খাতে বড় ধরনের আলোড়ন তৈরি করে। এআইয়ের প্রয়োগ নিয়ে একদিকে যেমন উৎফুল্লতা দেখা দেয়, অন্যদিকে এর অপপ্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন অনেকেই। বিভিন্ন দেশ, প্রতিষ্ঠান এআইয়ের জন্য নীতিমালা আইন প্রণয়ন করা শুরু করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন চাকরির প্রায় ৪০ শতাংশ কেড়ে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। 

চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তরফ থেকে এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এআই চ্যাটবট বা এই জাতীয় পণ্য জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার আগে সরকারের নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটির কাছে জমা দিতে হবে। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকি ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য এআই কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। পারমাণবিক অস্ত্রের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ যাতে সর্বদা মানুষের হাতে থাকে, তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হতে পারে। অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন প্যানেলে অংশ নেওয়া গুগলের সুন্দর পিচাই এবং ওপেনএআইর স্যাম অল্টম্যানসহ প্রযুক্তি নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক স্তরে এআই নিয়ন্ত্রণের ধারণাকে সমর্থন করেছেন। 

গত অক্টোবরে মার্কিন সরকার এই ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করে। এই আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্য জোটগুলোও এআই ব্যবহারের নীতিমালা করেছে।

জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির সমকালকে বলেন, এআই আগামী দিনের অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে। এর প্রয়োগে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি হবে। তেমনি এর অপপ্রয়োগ ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সংকট তৈরি করতে পারে। তাই এআই নিয়ে নীতিমালা জরুরি। তিনি বলেন, নীতিমালা বা আইন যাই হোক, তা প্রণয়নে একটি বিষয়ে জোর দিতে হবে। আর তা হলো, আইনকানুন যেন প্রযুক্তির বিকাশে অন্তরায় না হয়।

সফটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইন, এটুআই আইনসহ সম্প্রতি প্রণীত বিভিন্ন আইনের সময় অংশীজনের মতামতের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। এআই পুরোটাই তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক। এ-সংক্রান্ত আইন করতে অবশ্যই অংশীজনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

আইনে কী কী থাকছে– জানতে চাইলে গতকালের বৈঠকের আইনমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে সেটা আমরা বলতে চাই না। কারণ, এটাও পরিবর্তনশীল। ‌বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, অন্যান্য জায়গায় কী আইন হচ্ছে সেটা একটু পরীক্ষা করার জন্য এই সময়টুকু নিয়েছি। 

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে আইনমন্ত্রী নির্দেশনা দেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমরা কী ভাবছি ও আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আমরা কতটা প্রস্তুত। তাঁর নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করি এবং যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করি। তিনি বলেন, এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ ও বড় একটা বিতর্ক হচ্ছে, আমরা কতটুকু উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করব, কতটুকু অপপ্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ করব। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন দেখেছি, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিকিউটিভ অর্ডার দেখেছি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ যেসব দেশ ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন পলিসি, গাইডলাইন, আইন করেছে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সবার মতামত নিয়ে এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে মন্ত্রীর কাছে আবার আসব। এর পর অংশীজন হিসেবে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। 

 

আরও পড়ুন

×