একাডেমিক শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি, নিতে হবে চূড়ান্ত বিদায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আবাসিক হলের ছোট্ট একটি কক্ষে কত শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ভাষা, ধর্ম, বর্ণ ভুলে এখানে সবার সঙ্গে তৈরি হয়েছে বন্ধুত্বের এক মেলবন্ধন। আনন্দ-আড্ডা, সুখ-দুঃখে কেটেছে কত সুমধুর সময়। সেই স্মৃতিগুলো স্মরণ করে এখন বিদায় নেওয়ার পালা। প্রিয় আবাসস্থলে শেষ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় জানাতে আয়োজন করা হয় সমন্বিত হল সমাপনীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। কুয়াশা ভরা শীতের শুভ্র সকালে আকাশে রক্তিম সূর্য উঁকি দিয়েছে। আস্তে আস্তে সে আলোয় আলোকিত চারপাশ। সকাল ১০টা থেকেই বিভিন্ন হলের ব্যানারে শোভাযাত্রা নিয়ে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আসতে থাকেন বিদায়ী শিক্ষার্থীরা। একেক হলের শিক্ষার্থীদের পরনে আলাদা রংবেরঙের জামা, হাতে বাঁশি। মেয়েরা এসেছেন লাল, গোলাপি শাড়ি পরে। স্টেডিয়ামজুড়ে যেন বইছে উৎসবের হাওয়া।

গানের তালে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা শুরু করেন কালার ফেস্ট। হাতের আলতো ছোঁয়ায় লাল, হলুদ, সবুজ, নীলসহ নানা রঙের আবিরে রাঙিয়ে দেন একে অপরকে। সঙ্গে হৈহুল্লোড় আর বক্সে ডিজে গানের সঙ্গে নাচানাচি। তাঁদের পরনে থাকা টি-শার্টে একে অপরের মনের অগোছালো কথাগুলো রঙিন কালি দিয়ে লিখতে থাকেন। টি-শার্টগুলো অব্যক্ত অনুভূতি আর ভালোবাসা মাখা উক্তিতে ভরে ওঠে। যেন সেগুলো এই ভালোবাসার বন্ধনের প্রতীক। এরপর সকাল ১১টায় ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই আয়োজনকে সমাপনী বলব না, এটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। তোমরা পড়াশোনা শেষ করেছ, এখন একটি বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশ করবে। তোমরা প্রাক্তনী হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করবে। তোমাদের প্রতি দুটি দায়িত্ব রয়েছে; একটি হলো সমাজ ও পরিবারের প্রতি, অন্যটি হলো তোমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে ১৭টি হলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে সাবাশ বাংলাদেশ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় গানের তালে নেচেগেয়ে নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার জানান দেন শিক্ষার্থীরা। ফটোসেশন আর স্মৃতির অ্যালবামে নিজেদের ফ্রেমবন্দি করেন তাঁরা। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের শিক্ষার্থী চৈতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এটিই আমাদের শেষ প্রাপ্তি। পাঁচ বছর শিক্ষাজীবন শেষে এ স্বীকৃতি আমাদের কাছে খুবই আনন্দের। হল আমাদের দ্বিতীয় বাসা। এ বাসা ছেড়ে চলে যাওয়া আসলেই অনেক কষ্টের। সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম বলেন, আজকের দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের ১৭ হলের বন্ধুবান্ধব একসঙ্গে হতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। বিদায় তো নিতেই হবে, আজ আমরা নিচ্ছি, কাল আমাদের জুনিয়ররা নেবে। কারণ, অন্যকে জায়গা করে দিয়ে বিদায় নেওয়াই মানবধর্ম। তবে সব সময় স্মৃতির পাতায় থাকবে মতিহারের সবুজ চত্বর।