দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক নিট এবং ওভেন দুই ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। নিট হচ্ছে গেঞ্জি ও সোয়েটার জাতীয় পোশাক। ওভেন হচ্ছে শার্ট, প্যান্ট ও অন্যান্য পার্টি পোশাক। সমাপ্ত ২০২২ সালে ওভেনের চেয়ে নিটের রপ্তানি বেশি হয়েছে ৩৭২ কোটি ডলার। ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা বিনিময় হারে নিটের রপ্তানি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এ নিয়ে টানা তিন বছর ওভেনের চেয়ে নিটের রপ্তানি বেশি হলো। এর আগের বছরগুলোতে ওভেনের রপ্তানি বেশি ছিল।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে মানুষ ঘরে বেশি সময় কাটিয়েছে। ঘরে ব্যবহার্য পোশাক হিসেবে নিটের চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া নিট পণ্য উৎপাদনে অন্তত ৮০ শতাংশ কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। ফলে উৎপাদন সময় ও ব্যয় তুলনামূলক কম। এতে রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছাতে সময় (লিড টাইম) কম লাগছে। অন্যদিকে, ওভেন পোশাক উৎপাদনে কাঁচামালের বড় একটা অংশ চীন এবং ভারত থেকে আমদানি করতে হয়।

২০২২ সালে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৪ হাজার ৫৭১ কোটি ডলার। এর মধ্যে ওভেনের রপ্তানির পরিমাণ ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার। নিটের রপ্তানি ২ হাজার ৪৭১ কোটি ডলারেরও বেশি। ২০২১ সালে ওভেনের চেয়ে নিটের রপ্তানি বেশি ছিল ৩৩৮ কোটি ডলার। ওই বছর ওভেন রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬২২ কোটি ডলার। নিটের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার। একইভাবে ২০২০ সালে ওভেনের চেয়ে নিটের রপ্তানির পরিমাণ বেশি ছিল প্রায় ১০০ কোটি ডলার।

নিট পোশাকের মধ্যে প্রধান পাঁচ পণ্য হচ্ছে- বিভিন্ন ধরনের টি-শার্ট, পলো শার্ট, ট্রাউজার, সোয়েটার ও জ্যাকেট। নিটপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, করোনায় নিটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণ ছাড়াও ফ্যাশন দুনিয়ায় 'ফরমাল' পোশাকের চেয়ে 'ক্যাজুয়াল' পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম তন্তুর পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেও নিটের চাহিদা বাড়ছে। তিনি বলেন, নিটের রপ্তানি বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে, এর স্থানীয় মূল্য সংযোজন বেশি। অর্থাৎ এতে দেশ বেশি লাভবান হচ্ছে।

অন্যদিকে, ওভেন পণ্যের মধ্যে শার্ট, প্যান্ট, ডেনিম ও পার্টি ড্রেস, স্যুট ইত্যাদি। বিজিএইএর সহসভাপতি শহিদ উল্লাহ আজিম সমকালকে বলেন, ওভেনের রপ্তানিও কমেনি। বরং প্রতিবছরই বাড়ছে। তবে স্থানীয়ভাবে নিটের কাঁচামালের জোগান দিন দিন বেড়ে যাওয়ার ফলে নিট এগিয়ে যাচ্ছে। কাঁচামাল স্থানীয় বাজার থেকে পাওয়া গেলে ওভেনের রপ্তানিও আরও বাড়বে। এজন্য ওভেনের পশ্চাৎসংযোগ শিল্পে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন।

পুরোনো উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯ সালে নিটের চেয়ে ওভেনের রপ্তানি বেশি ছিল ২০ কোটি ডলার। এর আগের বছরগুলোতে এই ব্যবধান আরও বেশি ছিল। পোশাক রপ্তানি শুরুর দিক থেকেই নিটের চেয়ে ওভেনের রপ্তানি অনেক বেশি ছিল। ১৯৯৪ সালে ১৫৪ কোটি ডলারের ওভেনের রপ্তানির বিপরীতে নিটের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৪ কোটি ডলার। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ওভেনের চেয়ে নিটের রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত টানা ২৬ বছর এ প্রবণতা ছিল।