- বাংলাদেশ
- বিমানের পাঁচ কোটি টাকার সফটওয়্যার কাজে আসেনি
বিমানের পাঁচ কোটি টাকার সফটওয়্যার কাজে আসেনি

ছবি: ফাইল
বিভিন্ন রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনায় লাভ-লোকসানের হিসাব নির্ধারণে ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে দুটি সফটওয়্যার কেনা হলেও তা কার্যত কোনো কাজে আসেনি। দুর্নীতির জন্য বিমানের ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করে এগুলো কেনা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কেনাকাটায় বিমানের সিন্ডিকেটের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিমানের মহাব্যবস্থাপক (রেভিনিউ অ্যান্ড এফএমআইএস, অর্থ পরিদপ্তর) মিজানুর রশীদের বিরুদ্ধে গত ৭ জানুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরে নিয়োগ করা হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা।
বিমান কর্তৃপক্ষের পরিচালক প্রশাসন ছিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, মিজানুর একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির সফটওয়্যার কেনার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিমানের ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করেছেন। তবে জবাবে মিজানুর উল্লেখ করেছেন, সফটওয়্যার কেনার সঙ্গে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই জড়িত।
অভিযোগ উঠেছে, মিজানুর এবং তাঁর সহযোগীরা অবৈধ আর্থিক সুবিধার জন্য কর্তৃপক্ষকে মনগড়া ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করেন।
২০১৬ এবং ২০১৮ সালে সফটওয়্যার দুটি কেনা হয়। 'ফ্লাইট প্রফিটিবিলিটি সিস্টেম' (এফপিএস) এবং 'কস্ট অ্যান্ড বাজেট' সফটওয়্যার নামের এ সফটওয়্যারের নির্মাতা এক্লেয়া কেল সলিউশন। সফটওয়্যার দুটি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বিমান ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক্লেয়াকে ৫ কোটি ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত বিমান মাইক্রোসফট এক্সেলের ফাংশন ব্যবহার করে নিজস্ব পদ্ধতিতে 'রুট কস্টিং' (বিভিন্ন রুটের ফ্লাইট পরিচালনার মোট খরচ) এবং 'রুট প্রফিটিবিলিটি' (লাভসহ বিভিন্ন রুটের ভাড়া নির্ধারণ) প্রস্তুত করত। পরে এ দুই কাজের জন্য মিজানুর দুটি সফটওয়্যার কেনেন।
এর মধ্যে ২০১৮ সালে কেনা ফিন্যান্স বাজেটিং সফটওয়্যারটি পরবর্তী সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ এটি কোনো কাজে আসেনি। অন্য সফটওয়্যার এফপিএস (ফ্লাইট প্রফিটিবিলিটি সিস্টেম) দিয়ে কাজ শুরু করা হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
তবে বিমানের অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগে বিমান নিজস্ব পদ্ধতিতে ৫ থেকে ১০ বছরের আগাম পরিকল্পনা, উড়োজাহাজ ক্রয়ের ফিজিবিলিটি অ্যানালাইসিস করতে পারত। বর্তমানে এই সফটওয়্যারে এটি করা যায় না। ফলে মিজানুরের কেনা দুটি সফটওয়্যারই কোনো কাজে আসেনি। উল্টো তাঁর কেনা সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্ষতির মুখে পড়েছে বিমানের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা।
কারণ দর্শানোর জবাবে মিজানুর বলেছেন, বিমানের জন্য একটি যুগোপযোগী সফটওয়্যার কেনার জন্য তৎকালীন সিএফও ভিনিদ সুদ বারবার তাঁকে মৌখিক নির্দেশনা দেন। বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো।
তবে বিষয়টিতে বিমানের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট জড়িত বলেও তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্নিষ্টরা জানান, বিমানে কোনো সফটওয়্যার কেনার আগে তার বিকল্প কী কী আছে এবং সেগুলোর বিষয়ে আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) দিতে হয়। মিজানুর তা দেননি। এ ছাড়া তিনি বিমানের আইটি বিভাগ বা অন্য কোনো কমিটির পরামর্শ না নিয়ে ইন্টারফেস কস্ট সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করেন। প্রোটোকল অনুযায়ী, কোনো কিছু কেনার আগে যেসব কর্মকর্তার মতামত নিতে হয়, তাও নেননি তিনি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে গত তিন দিনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয় মিজানুরকে। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম সমকালকে বলেন, 'ক্রয়নীতি ভঙ্গ করায় তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তবে সেটি সন্তোষজনক না হওয়ায় একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন। এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মন্তব্য করুন