- বাংলাদেশ
- বর্ণাঢ্য ডিজিটাল মেলা
বর্ণাঢ্য ডিজিটাল মেলা

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত হলো ইন্টারেনট ও টেলিযোগনির্ভর তথ্যপ্রযুক্তি ও সেবার প্রদর্শনী 'ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২৩'।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত মেলায় ৭৭টি ছোট-বড় প্যাভিলিয়ন এবং ৫২টি স্টলে আইসিটি কোম্পানি, টেলিকম অপারেটর, মোবাইল আর্থিক পরিষেবা দাতা, ইন্টারনেট এবং অবকাঠামো কোম্পানি অংশ নেয়। পাশাপাশি দেশের তরুণ উদ্ভাবকদের নিয়ে ছিল উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী। মেলার আয়োজন সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি।
আগ্রহের কেন্দ্রে নতুন প্রযুক্তি
তিন দিনের বর্ণাঢ্য এ মেলায় দর্শকদের নতুন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। নতুন প্রজন্মের রোবট, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, আইপিভি সিক্সসহ উচ্চগতির ইন্টারনেট, ফাইভজি প্রযুক্তির সর্বশেষ সংযোজন পরখ করে দেখেছেন মেলায় আগত প্রযুক্তিপ্রেমীরা। মেলার ঢোকার প্রবেশদ্বারকে এবার প্রযুক্তির স্পর্শে নান্দনিকভাবে তৈরি করা হয়। প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়েই মেলায় আসা অনেককে ছবি তুলতে দেখা যায়। মেলায় ঢোকার মুখেই ছিল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ের প্যাভিলিয়ন।
হুয়াওয়ের প্যাভিলিয়নে ৫.৫জি, এন্টারপ্রাইজ বিজনেস সল্যুশন, হুয়াওয়ে ক্লাউড ও ডিজিটাল পাওয়ারের মতো বিভিন্ন যুগান্তকারী উদ্ভাবন প্রদর্শন করেছে। ছিল সার্ভিস রোবট, স্মার্ট পোর্ট ও ডিজিটাল পাওয়ার সল্যুশন, ডিজিটাল শিক্ষা ও ডিজিটাল স্বাস্থ্য ডেমো সাইট। মেলায় আরও এক চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট জেডটিই প্রদর্শিত রোবট দর্শকদের আকৃষ্ট করে, বিশেষ করে খুদে দর্শক রিমোটচালিত রোবটটির কর্মকাণ্ড দেখে অভিভূত হয়। হুয়াওয়ের মতো জেডটিইও দেখিয়েছে ফাইভজি প্রযুক্তির চমক। মেলায় টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও টেলিটক তাদের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে। মেলায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ স্টলে বিভিন্ন অপারেটরের 'গোল্ডেন নম্বর' লটারির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। মেলায় শীর্ষ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারাও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্যাকেজে ছাড় ও অফার ঘোষণার মাধ্যমে অংশ নেয়। ওয়ালটন, টেশিস ও ভিসতার মতো দেশীয় হার্ডওয়্যার পণ্য নির্মাতারাও ছিল এবারের মেলায়।
টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোনের প্যাভিলিয়নেও ছিল রোবটিক হাতের প্রদর্শনী। কৃত্রিম বুদ্ধিনির্ভর এ হাত তার সামনে থাকা ব্যক্তির হাতের নড়াচড়াকে নকল করতে পারে।
মেলায় মুজিব কর্নারে হলোগ্রাফির পাশাপাশি ভিআর হেডসেটে মুক্তিযুক্ত জাদুঘরের ভেতর-বাহির দেখার আনন্দ নিয়েছেন দর্শনার্থীরা। ভিআর হেডসেটে গেম খেলে এবং অজানাকে জানার মাধ্যমে আপ্লুত শিশুরা। সাত বছর বয়সী আরিফ মেলায় এসেছিল বাবার হাত ধরে। মেলার নতুন সব প্রযুক্তি উদ্ভাবন দেখে সে ভীষণ আপ্লুত। সে জানায়, 'ভিআরের মাধ্যমে ডাইনোসর, অজানা দুনিয়া গেম খেলতে পেরেছি, এটা অসাধারণ অনুভূতি। আমি ভীষণ খুশি।' কিউআর কোডের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধুর জীবনী সম্পর্কিত বইও ডাউনলোড করে নেওয়ার সুযোগ ছিল মেলায়। মেলায় ইনোভেশন জোনে সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি উদ্ভাবন তুলে ধরেন উদ্ভাবকরা। অংশগ্রহণকারী অর্ধশতাধিক উদ্ভাবনের মধ্য থেকে তিনটি উদ্ভাবনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। উদ্ভাবনের মধ্যে প্রথম হয়েছে সেলফ ব্যালান্সিং রোবট।
দ্বিতীয় হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জের নকশা এবং তৃতীয় হয়েছে অ্যাডভাইজার বাংলাদেশ। আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক সমকালকে বলেন, এবারের মেলায় দেশের তরুণ উদ্ভাবকদের আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবকরা তাঁদের প্রজেক্ট প্রদর্শন করেছেন। মেলায় আগতদের ভোটে সেরা তিন উদ্ভাবনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পঞ্চম শিল্পবিপ্লব ও ফাইভজি অবকাঠামো, দুর্যোগকালীন টেলিযোগাযোগ খাত, ডাটা সায়েন্স, রোবটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতে ডিজিটাল পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়ে তিন দিনের মেলায় মোট ৮টি সেমিনার আয়োজিত হয়। মেলা সম্পর্কে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ও সেবা উপভোগের সুযোগ ছিল এবারের মেলায়। মেলা আয়োজনে সরকারের কোনো অর্থ খরচ হয়নি। পুরো টাকাই আমরা স্পন্সর থেকে সংগ্রহ করেছি।
মন্তব্য করুন