- বাংলাদেশ
- প্রতিবাদ করায় কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা
প্রতিবাদ করায় কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা

নিম্নমানের কাজ ও গাছ কেটে বাঁধের ক্ষতির প্রতিবাদ করায় শাল্লায় কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সভাপতি। উপজেলার ছায়ার হাওর উপপ্রকল্পের ২২ নম্বর পিআইসির আনন্দপুর এলাকায় কৃষক কালাই মিয়া তালুকদার ও আজিজ মিয়া তালুকদারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে সোমবার বিকেলে মামলা করেন পিআইসি সভাপতি রেজু মিয়া।
২০১১ সালে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উদ্যোগে ওই বাঁধে দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণের জন্য মাটি ফেলা হয়। ১২ বছর ধরে বাঁধটি অক্ষত। বাঁধের পূর্ব পাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো ৩০-৪০টি মেরা, বরই ও অন্যান্য গাছও ছিল। কিন্তু ছায়ার হাওর উপপ্রকল্পের আওতায় ২২ নম্বর পিআইসির লোকজন এসব গাছ কেটে ফেলেছে। স্থানীয়রা জানান, গাছগুলো কেটে বাঁধটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে পিআইসি কমিটি।
কৃষক আজিজ মিয়া বলেন, বাঁধে রেইনট্রি, মেরা, বরইসহ বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছ ছিল, কমিটির লোকজন গাছগুলো কেটে ফেলেছে। এতে বাঁধ দুর্বল হয়েছে।
আজিজ মিয়া জানান, ২০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাঁধের কাজে। কিন্তু বাঁধ রক্ষার জন্য সেখানে এত বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল না। অল্পকিছু কাজ করে প্রকল্পটি শেষ করেছে পিআইসির লোকজন। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন তাঁরা।
কৃষক ও সাবেক ইউপি সদস্য কালাই মিয়া বলেন, 'অন্যায়ের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর সঙ্গে মানববন্ধন করায় আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে চাঁদাবাজির মামলা করেছে তারা (পিআইসি কমিটি)। এলাকার কেউ আমাদের ওপর কোনো দিন এ রকম অভিযোগ করেনি।'
আজিজ মিয়া ও কালাই মিয়া জানালেন, সোমবার বিকেলে পুলিশ ও পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) প্রকৌশলী বাঁধে এসে তাঁদের দোষারোপ করে বলেছেন, মানববন্ধন করা ঠিক হয়নি। কাজে অনিয়ম হলে পাউবো প্রকৌশলীকে জানানোর কথাও বলে যান তাঁরা।
পাউবোর শাল্লার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম সমকালকে বলেন, বাঁধে গিয়ে কাউকে দোষারোপ করা হয়নি। বলা হয়েছে কাজ এখনও শেষ হয়নি। শেষ হবার পর কোনো ভুল হলে জানানোর কথা বলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পুলিশ সঙ্গে করে নিয়ে যাননি তিনি। আগে থেকেই সেখানে পুলিশ ছিল। তারাও কাউকে দোষারোপ করেনি।
২২ নম্বর পিআইসি সভাপতি রেজু মিয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ২-৪টা চারা গাছ কেটেছি। এতে বাঁধের ক্ষতি হবে না।
শাল্লা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের পর সত্য-মিথ্যা জানা যাবে।
গত রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাঁধ রক্ষার নামে পিএইসি কমিটির অনিয়ম ও অপকর্মের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন গ্রামবাসী। এতে ছায়ার হাওর উপপ্রকল্পের আওতায় ২২ নম্বর পিআইসির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও আব্দুল আজিজ তালুকদারের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন হবিবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য কালাই মিয়া তালুকদার।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কৃষক গরমোহন রায়, মৃৎশিল্পী অরবিন্দু পাল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিহির কান্তি রায়, কৃষক সুশীল শীল, রবীন্দ্র বিশ্বাস, অমর চাঁদ দাশ, বাবুল দাশ, অঞ্জন দাশ, বকুল দাশ ও কলেজ শিক্ষার্থী জুয়েল রায় প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বাঁধের ক্ষতি করা হয়েছে, বাঁধের দুই পাশের মধ্য ভাগে বাঁশের আড়ি দিয়ে। এতে বাঁশের গোড়া পচে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হবে। যেভাবে কাজ করা হচ্ছে তা খাল কেটে কুমির ডেকে আনার মতোই। প্রকৃতপক্ষে এই বাঁধে কোনো প্রকল্পেরই প্রয়োজন ছিল না।
মন্তব্য করুন