প্রবাসী কর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জোর পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অভিবাসনবিষয়ক বিশেষ দূত ফিলিপ গঞ্জালেস মোরালেস।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। এ আয়োজন করে ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয়।

বাংলাদেশে ১১ দিনের সফর শেষে তিনি বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় প্রবাসী কর্মীদের নিয়োগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি বলে পরামর্শ দেন তিনি।

মোরালেস বলেন, বর্তমানে বিদেশ যেতে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কারণে প্রবাসীরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দালালদের কারণে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। বিদেশ যাওয়া, ফিরে আসা পর্যন্ত সব পর্যায়ে প্রবাসী কর্মীদের অধিকার সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

অভিবাসীদের সুরক্ষায় নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন মোরালেস। তিনি বলেন, স্বল্প দক্ষ কর্মীরা শোষণের শিকার হন। দরিদ্র হওয়ায় ও শিক্ষার অভাব থাকায় তাদের কাছে সঠিক তথ্য থাকে না, যা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে ও অভিবাসনের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে মোরালেস বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী কর্মী মধপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর কাজ করেন। এসব নারী গৃহকর্মী নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের কনস্যুলার পরিষেবা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাফেলা প্রথা বাতিল করতে হবে।

সফরকালে জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত কপবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহনশীলতা দেখেও মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য একটি টেকসই সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন।

লার্নিং সেন্টারের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা এবং জীবনমুখী দক্ষতা অর্জনের আরও সুযোগ দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মোরালেস। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড ও বন্যার হাত থেকে বাঁচতে ক্যাম্পে আবাসনের মান উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।

বাংলাদেশ সফরকালে অভিবাসীদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করা ছাড়াও সরকার এবং অভিবাসন-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মোরালেস। বাংলাদেশ সফর শেষে তার পর্যবেক্ষণ আগামী জুনে মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন তিনি।