আরও সংকটে পড়তে যাচ্ছে ভারতের প্রভাবশালী আদানি গ্রুপ। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কৃষিজমির ওপর খুঁটি বসিয়ে বিদ্যুতের লাইন নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কার কৃষকরা। গতকাল মঙ্গলবার ৩০ কৃষক কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। ওই লাইন দিয়ে বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি গ্রুপ। মামলার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারক রাজর্ষি ভরদ্বাজের হাইকোর্ট বেঞ্চ। কৃষকদের দাবি, বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং বন আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শেষ করেছে আদানি গ্রুপ। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে জাতীয় গ্রিড পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে আদানি। এখন ২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আসছে।

এ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ভারতের ঝাড়খন্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। শুরু থেকেই মুর্শিদাবাদের কৃষকরা এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। গত বছর গ্রামবাসী বিক্ষোভ করলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। কৃষকদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে আম ও লিচুবাগানের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের উচ্চ ক্ষমতার লাইন নেওয়া হচ্ছে। এতে আম-লিচুর বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ছয় মাসে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হলেও ক্ষতিপূরণ পাননি চাষিরা। এ কারণে তাঁরা মামলার পথ বেছে নিলেন। তাঁদের পক্ষে মামলাটি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ঝুমা সেন।

মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের কর্মী রণজিৎ সুর বলেন, পুরো প্রক্রিয়া বেআইনিভাবে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে আদানির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাবে, অথচ রাজ্যটির সঙ্গে তাদের কোনো চুক্তি নেই। যাঁদের জমির ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন যাচ্ছে, তাঁদের সঙ্গেও চুক্তি নেই। তাঁদের সম্মতিও নেওয়া হয়নি। ভারতের বিদ্যুৎ সঞ্চালন আইন বা বন সংরক্ষণ আইন- কোনোটাই মানা হয়নি। তাই আদালতের কাছে আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটি ও কৃষকরা সম্মত হলে তাঁদের চুক্তির মাধ্যমে প্রতি বছর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করে আদানি যে লাভ করবে, এর লভ্যাংশও কৃষকদের দিতে হবে।

আইনজীবী রণজিৎ জানান, গাছ কাটার জন্য পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, এর জন্যও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। গত জুলাইয়ে কৃষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের ওপর থেকে সব মামলা তুলে নিতে হবে।