টাঙ্গাইলে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা সৈনিক শামসুল হকের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শামসুল হকের আমেরিকা প্রবাসী দুই মেয়ে ৭০ বছর পর প্রথমবারের মতো বুধবার টাঙ্গাইলে আসেন। তাঁরা জেলা সদরে অবস্থিত শামছুল হক তোরণ ঘুরে দেখেন ও শামছুল হকের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। 

১৯৫৩ সালে ভাষা আন্দোলনের পর কারাবন্দি শামসুল হকের স্ত্রী আফিয়া খাতুন দুই শিশু কন্যা শাহীন ফাতেমা দিল ও শায়েকা দিল ভার্টিলেককে নিয়ে দেশত্যাগ করেন। এরপর তাঁরা এই প্রথম টাঙ্গাইলে আসলেন।

ড. শাহীন ফাতেমা দিল অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক তিনি। টাঙ্গাইল এসে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জন্মস্থানে আসতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। আত্বীয়-স্বজন ও অন্যান্য লোকদের আতিথিয়তায় আমরা মুগ্ধ। আমার বাবা রাজনীতি করেছেন। আমার বাবাকে দেশের মানুষ এত সম্মান করেন দেখে আমরা সত্যিই অভিভূত। আমার বাবা ভাষা আন্দালনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তান চেয়েছিল দেশে উর্দুভাষা হবে। তাঁরা লড়াই-সংগ্রাম করে বাংলা ভাষাকে ছিনিয়ে এনেছেন। টাঙ্গাইলে বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

অপর মেয়ে নাসার অ্যাস্ট্রোফিজিসিয়েস্ট ড. শায়েকা দিল ভার্টিলেক বলেন, দেশে এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও অভিভূত। আমি আরও আনন্দিত যে, দেশের মানুষ আমার বাবাকে এত সম্মান করে। তিনি প্রতি বছর দেশে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

বুধবার তাঁরা বাবার জন্মদিনের নানা কর্মসূচিতে যোগ দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এ সময় তিনি দুই বোনকে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি উপহার দেন।

দুপুরে তাঁরা কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভা এলাকায় শামসুল হক মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বাবার জন্মদিনের কেক কাটেন। 

কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ড. শাহীন ফাতেমা দিল ও ড. শায়েকা দিল ভার্টিলেক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক আল মুজাহিদী, শামসুল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার মোল্লা, দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শিবলী সাদিক, এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়ের নুরে আলম সিদ্দিকী, দেলদুয়ার উপজেলা মহিলা আয়ামী লীগের সভাপতি ও দেউলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাহমিনা হক প্রমুখ। তাঁরা কলেজে শতশত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেক কেটে বাবার জন্মদিন উদযাপন করেন।

দুপুরে দুই মেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় লোকজন নিয়ে কালিহাতি উপজেলার কদিমহামজানি যোকারচর কবরস্থানে বাবার কবর জিয়ারত ও পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

শামছুল হকের ভাতিজা ও শামছুল হক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা, সাইফুল ইসলাম স্বপন বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, শামছুল হকের দুই মেয়ে আছে আমরা জানতাম না। টাঙ্গাইল শহরের আদালত পাড়ার ছেলে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী ফরিদ আহমেদের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। ২০১৩ সালে দুই বোনের সঙ্গে আমরা প্রথম ফোনে যোগাযোগ করি। তখন থেকে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

১৯৪৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আফিয়া খাতুনের সঙ্গে শামছুর হকের বিয়ে হয়। ১৯৫১ সালের ৯ এপ্রিল শাহীন ফাতেমার দিল ও ১৯৫২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শায়েকা দিলের জন্ম হয়। ১৯৫৩ সালে দুই মেয়েকে নিয়ে আফিয়া খাতুন আমেরিকা চলে যান। ওই সময় শামছুল হক কারাগরে ছিলেন। ১৯৬১ সালে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি টাঙ্গাইলে বাড়িতে আসেন তাঁর মাকে দেখার জন্য। পরদিন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এরপর তাঁর আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।