- বাংলাদেশ
- প্রশিক্ষণ পাননি প্রধান শিক্ষকরা
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে তালগোল
প্রশিক্ষণ পাননি প্রধান শিক্ষকরা

ছবি: ফাইল
নতুন শিক্ষাক্রম চালুর এক মাস পার হতে চলেছে। এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। অথচ তাঁরাই এখনও প্রশিক্ষণ পাননি। ফলে বিষয়টিতে তালগোল পাকিয়ে গেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হওয়া এই শিক্ষাক্রমের বিষয়ে শিক্ষকদের সরাসরি ও অনলাইনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। অথচ প্রশিক্ষণ থেকে বাদ রাখা হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের। ফলে এই শিক্ষাক্রম বিষয়ে কোনো নূ্যনতম ধারণা না থাকায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছেন তাঁরা। ক্ষেত্র বিশেষে বাধাও হচ্ছে।
গত ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে নামকাওয়াস্তে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। আর সরাসরি প্রশিক্ষণ শুরু হয় গত ৬ জানুয়ারি থেকে। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিনগুলোতে মোট ৫ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০-২৪ জানুয়ারি বাদ পড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
শিক্ষকরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম প্রশিক্ষণে হাতেকলমে শিক্ষাদানের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় দেখানোর জন্য সংশ্নিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করবে। তারা খাতায় বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরবে, দেয়ালিকা তৈরি করবে। পাঠাগারসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে হবে।
তবে নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকের ধারণা নেই। প্রশিক্ষণ না থাকায় তাঁরা বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেনই না। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সমস্যা তো আছেই। ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলার মাঠ নেই। নেই কোনো বাগান ও অন্য কিছু। আবার শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শিক্ষাদানের কথা বলা হলেও অনেক প্রয়োজনীয় উপাদানই গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানে নেই।
সংশ্নিষ্ট শিক্ষকরা জানান, শিক্ষাক্রম নিয়ে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন করতে হলে অবকাঠামোগত দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষকদের দ্রুত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার জনতাবাগ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন সমকালকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে যেসব উপকরণ প্রয়োজন, একজন শ্রেণি শিক্ষকের পক্ষে তা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এসব সংগ্রহ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় উপকরণগুলো শ্রেণিকক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। হাতেকলমে শেখানোর ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষকরা।
ময়মনসিংহের কাতলাসেন কাদেরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার একজন শিক্ষক বলেন, আমাদের কৃষি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঠে নিয়ে গেছেন। কারণ ক্লাসটা মাঠে নিয়ে গিয়েই করতে বলা হয়েছে শিক্ষাক্রমে। এটা অধ্যক্ষের চোখে পড়েছে। তখন তিনি ক্লাস না করিয়ে কেন শিক্ষার্থীদের মাঠে নিয়ে যাওয়া হলো, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। কিছু পাঠ শুরুই করতে হবে গল্প দিয়ে। এটা করায় প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকরা ভাবছেন আমরা না পড়িয়ে ক্লাসে গল্প করছি! তিনি বলেন, এর কারণ প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এখনও প্রশিক্ষণ পাননি। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে হয়তো এসব সমস্যা থাকবে না।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার একজন মাস্টার ট্রেইনার বলেন, প্রশিক্ষণের আগে শিক্ষকদের মাঝে শিক্ষাক্রম নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা ছিল। প্রশিক্ষণের পরে সেটা হয়তো কিছুটা কেটেছে। তবে প্রশিক্ষণের বাইরে থাকায় প্রধান শিক্ষকরা এখনও নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছেন।
জানা গেছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের শুরুতেই হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মাধ্যমিক শিক্ষদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে। তবে কাজটি তারা সুচারুভাবে করতে পারছে না। সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্যকে সাময়িকভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নতুন শিক্ষাক্রম ডিসেমিনেশন স্কিমের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার গত ২৪ জানুয়ারির এক প্রজ্ঞাপনে নতুন পরিচালক করা হয়েছে তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলীকে। এখনও তিনি কাজে যোগ দেননি। আগের পরিচালক প্রধান শিক্ষকের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে গেছেন। নতুন পরিচালক কাজ শুরু করলে ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হতে পারে।
মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, প্রধান শিক্ষকদের আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। ৩২ হাজার প্রধান শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এদিকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বেতন-ভাতা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলছেন, সরকার নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের পরিশ্রম বেড়েছে। অথচ শিক্ষকদের জীবনমান অনুন্নত। অনার্স-মাস্টার্স পাস করে শিক্ষকতায় ঢুকেও পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ শিক্ষক পরিবার আর্থিক সংকটে ভুগছে।
মন্তব্য করুন