রাজনীতি মানেই অর্থ বিত্ত আর গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা- এমন মন্তব্য করে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, রাজনীতি আজ লুটেরাদের হাতে। অর্থনীতি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে চাটুকাররা ফায়দা লুটছে এবং চেষ্টা করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নীতিনৈতিকতা আর আদর্শের সেই আওয়ামী লীগ নেই।

রোববার সংসদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এক বক্তব্যের জের ধরে তিনি বলেন, শক্তিশালী আর দুর্বল যাই বলেন না কেন, বর্তমানে এই সংসদে তিনিই একমাত্র সত্যিকারের বিরোধী দলের সদস্য। এর বাইরে যারা আছেন তারা আসলে সকলেই মহাজোটের শরিক দল। তারা অনেকেই আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং ২০১৮ সালেও মন্ত্রিসভায় যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন।

গত ৯ জানুয়ারি সংসদে সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের একাংশ উল্লেখ করে মোকাব্বির খান বলেন, ‌‘প্রধানমন্ত্রী সঠিক তথ্য নিয়ে কথাগুলো বলেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমি বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছি। আমার সেকেন্ড হোমের কথা বলেছেন, আমার বিলাসী জীবনযাপনের কথা বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই পার্লামেন্টের বর্তমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ তাদের অনেকেই বাংলাদেশের অর্থ লুটপাট করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম তৈরি করেছেন। এই সেকেন্ড হোম নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। তখন প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাবেন, তাই সেদিকে যাব না।’

গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, যুক্তরাজ্যে তাঁর সেকেন্ড হোম গোপনীয় কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি জানান, তাঁর সেকেন্ড হোম কোনো লুটপাটের অর্থ বা বাংলাদেশ থেকে পৈত্রিক জমি বিক্রি করে করেননি। ৪০ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ডে ব্যবসা করে বাড়ির মালিক হয়েছেন। এই সংসদের অনেকে এমপি হওয়ার সুবাদে হয়তো শতশত বা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মন্তব্য করে মোকাব্বির খান জানান, তাঁর মতো হতভাগা এমপি হয়তো এই পার্লামেন্টে একজনও নাই। ঢাকা বা সিলেটে বা বাংলাদেশের কোথাও কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই। সরকারি কোনো ফ্লাট বা প্লটের জন্য আবেদনও করেননি। উত্তরায় একটি বাড়ি কিনলেও এমপি হওয়ার পর অর্থাভাবে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। বিলাসবহুল গাড়ি তো দূরের কথা একমাত্র সংসদ সদস্য যার কোনো গাড়িই নেই। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে ড. কামাল হোসেন একজন ত্যাগী কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। আজকে যারা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করছেন, সেদিন তারা কোথায় ছিলেন? আজকের সংসদ উপনেতা (মতিয়া চৌধুরী) থেকে শুরু করে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে আন্দোলন করেছেন।

মোকাব্বির খান চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের দাবিদাররা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে পারবেন না। কারণ অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মুখে ফেনা তুললেও অন্তরে ধারণ করেন না। এক-এগারো শিক্ষা দিয়েছে আওয়ামী লীগের এখনো কোনো দুঃসময় আসলে সুবিধাভোগীদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেন, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থপাচার, কিছু কিছু জায়গায় সরকারের অব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাটের কারণে দ্রব্যমূল্য আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে গেলে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। যে যেভাবে খুশি সেভাবে লুটপাট করছে, তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না।

মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেকের জীবনমান নিচে নেমে যাচ্ছে, আবার অনেকে দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। সরকার এক কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূলের কার্ড দিয়েছে। এখানে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি হচ্ছে। এই কার্ডগুলোর ৮০ ভাগ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেওয়া হয়েছে, অসংখ্য প্রমাণ আছে। এমনকি একই পরিবারে একাধিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। গরিব মানুষ তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, সামনে রমজান মাসকে সামনে রেখে অসাধু সিন্ডিকেট আবারো সক্রিয় হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের কণ্ঠ বেড়ে যাবে। দুর্নীতিবাজ, অসাধু সিন্ডিকেট সবসময়ই মানুষের কণ্ঠকে পুঁজি করে লুটপাট করে। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, এই সকল দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের আইনের আওতায় এনে একটি ট্রাইবুনাল করে কয়েকজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ,লুটেরাকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করেন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, দুর্নীতি অনেক কমে যাবে। আশা করি, সাধারণ মানুষের কষ্টের কথাগুলো মাথায় নিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।